Tripsee Treks  and Tours LLP
Blog and Travel with Us

ভুবন ভোলানো ভুবনেশ্বর



Sushanto Kumar Saha Sushanto Kumar Saha

সকাল সাতটার দিকে যখন বাংলাদেশ বিমানের ফ্লাইট বিমানবন্দর ছেড়ে গেলো, তখন বিশ্বাস হচ্ছিলো না যে অবশেষে কোথাও বেড়াতে যাচ্ছি । মা আর ছোট ভাইকে নিয়ে ট্যুর ছিলো, তো স্বাভাবিক ভাবেই পাহাড় -পর্বত ট্রেকিং আছে এমন জায়গাগুলো প্ল্যান থেকে বাদ দিতে হয়েছে । সব ভেবে চিন্তে শেষমেশ ঠিক করলাম উড়িষ্যাই যাবো, উড়িষ্যার রাজধানী ভুবনেশ্বরে । ছোটবেলায় যখন বাংলা, বিহার, উড়িষ্যার নবাব সিরাজউদ্দৌলার কথা পড়তাম, তখম থেকেই উড়িষ্যা নিয়ে প্রচণ্ড আগ্রহ ছিলো । বিহার একবার ঘুরে ফেলেছি , তাই এবার উড়িষ্যা ঘোরা হয়ে গেলে ব্যাপারটা মন্দ হয় না ।   

আমাদের কলকাতা থেকে ভুবনেশ্বরের ফ্লাইট ছিলো সকাল এগারোটা পঞ্চান্ন মিনিটে । একটার সময় ভুবনেশ্বর এয়ারপোর্টে নামলাম । এয়ারপোর্টে নেমেই হতবাক হবার মতন অবস্থা । পুরো এয়ারপোর্ট সাজানো উড়িষ্যার স্যান্ড আর্ট আর হস্তশিল্প দিয়ে । প্রিপেইড ট্যাক্সি নিয়ে বের হয়ে পড়লাম আমাদের গন্তব্য ভুবনেশ্বর রামকৃষ্ণ মিশনের উদ্দেশ্যে । ওখানেই থাকার বন্দোবস্ত করে রাখা ছিলো । ভুবনেশ্বরের মিশনটি বেশ বড়; প্রচুর পরিমাণে গাছপালা সেখানে । সেখানে গিয়ে জানতে পারলাম; অনেক আগে পাশের বন থেকে মাঝে মাঝে চিতাবাঘও নাকি চলে আসতো সেখানে । মিশনে থাকার ভবনটি বেশ সুন্দর । আগেকার দিনের রাজবাড়ি টাইপ একটা ভাব আছে । দুপুর পেরিয়ে বিকাল হতে না হতেই বেরিয়ে পড়লাম সিএনজি নিয়ে । ৩০০ রুপি ভাড়া ঠিক করা হলো । প্ল্যান ছিলো সব নামকরা মন্দির গুলো ঘুরবো । ভারতে মন্দিরের শহর বলতে সবাই বেনারস বা কাশীর নাম শুনে থাকলেও ভুবনেশ্বর কোনভাবেই তার চেয়ে কম নয় । রাস্তার দুপাশ দিয়ে প্রায়ই চোখে পড়বে অনেক মন্দির; প্রতিটিই কারুকার্য মন্ডিত । আমাদের প্রথম গন্তব্য লিঙ্গরাজ মন্দির । মন্দিরটি  এত বেশি বিখ্যাত যে ভুবনেশ্বর ঘুরতে গিয়ে এই মন্দিরটি বাদ দিলে ভুবনেশ্বর ঘোরা অসম্পূর্ণই থেকে যাবে । মন্দির কমপ্লেক্সটি অনেক বড়, ছোট বড় প্রায় পঞ্চাশটির মতন মন্দির সেখানে । তবে সবচেয়ে  রাজকীয়ভাবে মাঝখানে দাঁড়িয়ে আছে সেই লিঙ্গরাজ মন্দির । একাদশ শতকে প্রতিষ্ঠিত এ মন্দিরের আরাধ্য দেবতা শিব লিঙ্গরাজ নামে পূজিত হন । লর্ড কার্জন ব্রিটিশ ইন্ডিয়ার ভাইসরয় থাকাকালীন এই মন্দির পরিদর্শন করেছিলেন । পুরোটাই পাথর দিয়ে তৈরি মন্দিরটি দেখলে চোখ ফেরানো দায় । মন্দিরটির সিকিউরিটি অত্যন্ত কড়া । ব্যাগ, পার্স, জুতো, মোবাইল ফোন, ক্যামেরা  এমনকি চামড়ার বেল্ট পর্যন্ত ভিতরে নিয়ে যাওয়া নিষেধ ।  

লিঙ্গরাজ মন্দির দর্শন শেষে একে একে সারদা দেবী মন্দির, মুক্তেশ্বর ও সিদ্ধ্বেশ্বর মহাদেবের মন্দির, কেদার গৌরী মন্দির, রাজা রাণী মন্দির, ইস্কন মন্দির ও রাম মন্দির ঘুরে সেদিনের মতন ঘোরার সমাপ্তি হলো।  মুক্তেশ্বর মন্দির স্থাপত্যশৈলীর দিক দিয়ে লিঙ্গরাজ ও রাজারানী মন্দিরের সমকক্ষীয় । তবে মন্দিরের পাশেই রয়েছে দৃষ্টি নন্দন পুকুর আর সামনে আছে সবুজ ঘাসে ঢাকা মাঠ । আর আনন্দের কথা, এখানে আগের মতন কড়া নিয়মকানুন নেই, মন চাইলেই যত খুশি ছবি তুলে নেয়া যায় । ঠিক পাশেই  রয়েছে কেদার- গৌরী মন্দির । এই মন্দিরের পাশেই খুব সুন্দর একটি হস্তশিল্পের দোকান আছে । ওডিসি নাচের জন্মস্থান উড়িষ্যা হস্তশিল্পের জন্যেও কম বিখ্যাত নয় । এখানকার পাথরের কারুকাজ অসাধারণ । আর চিত্রানুরাগীদের জন্যেও এখানে পাওয়া যায় অসম্ভব সুন্দর সব পেইন্টিং । রাজারানী মন্দিরটিতে পূজা অর্চনা হয় না, এটি সরকার কর্তৃক সংরক্ষিত । ইস্কন মন্দির আর রাম মন্দির প্রাচীন মন্দির নয়, তবে সৌন্দর্যের দিক দিয়ে তারাও কোনভাবেই কম নয় !

আমাদের কলকাতা থেকে ভুবনেশ্বরে ফ্লাইট ছিলো সকাল এগারোটা পঞ্চান্ন মিনিটে । একটার সময় ভুবনেশ্বর এয়ারপোর্টে নামলাম । এয়ারপোর্টে নেমেই হতবাক হবার মতন অবস্থা । পুরো এয়ারপোর্ট সাজানো উড়িষ্যার স্যান্ড আর্ট আর হস্তশিল্প দিয়ে । প্রিপেইড ট্যাক্সি নিয়ে বের হয়ে পড়লাম আমাদের গন্তব্য ভুবনেশ্বর রামকৃষ্ণ মিশনের উদ্দেশ্যে । ওখানেই থাকার বন্দোবস্ত করে রাখা ছিলো । ভুবনেশ্বরের মিশনটি বেশ বড়; প্রচুর পরিমাণে গাছপালা সেখানে । সেখানে গিয়ে জানতে পারলাম; অনেক আগে পাশের বন থেকে মাঝে মাঝে চিতাবাঘও নাকি চলে আসতো সেখানে । মিশনে থাকার ভবনটি বেশ সুন্দর । আগেকার দিনের রাজবাড়ি টাইপ একটা ভাব আছে । দুপুর পেরিয়ে বিকাল হতে না হতেই বেরিয়ে পড়লাম সিএনজি নিয়ে । ৩০০ রুপি ভাড়া ঠিক করা হলো । প্ল্যান ছিলো সব নামকরা মন্দির গুলো ঘুরবো । ভারতে মন্দিরের শহর বলতে সবাই বেনারস বা কাশীর নাম শুনে থাকলেও ভুবনেশ্বর কোনভাবেই তার চেয়ে কম নয় । রাস্তার দুপাশ দিয়ে প্রায়ই চোখে পড়বে অনেক মন্দির; প্রতিটিই কারুকার্য মন্ডিত । আমাদের প্রথম গন্তব্য লিঙ্গরাজ মন্দির । মন্দিরটি  এত বেশি বিখ্যাত যে ভুবনেশ্বর ঘুরতে গিয়ে এই মন্দিরটি বাদ দিলে ভুবনেশ্বর ঘোরা অসম্পূর্ণই থেকে যাবে । মন্দির কমপ্লেক্সটি অনেক বড়, ছোট বড় প্রায় পঞ্চাশটির মতন মন্দির সেখানে । তবে সবচেয়ে  রাজকীয়ভাবে মাঝখানে দাঁড়িয়ে আছে সেই লিঙ্গরাজ মন্দির । একাদশ শতকে প্রতিষ্ঠিত এ মন্দিরের আরাধ্য দেবতা শিব লিঙ্গরাজ নামে পূজিত হন । লর্ড কার্জন ব্রিটিশ ইন্ডিয়ার ভাইসরয় থাকাকালীন এই মন্দির পরিদর্শন করেছিলেন । পুরোটাই পাথর দিয়ে তৈরি মন্দিরটি দেখলে চোখ ফেরানো দায় । মন্দিরটির সিকিউরিটি অত্যন্ত কড়া । ব্যাগ, পার্স, জুতো, মোবাইল ফোন, ক্যামেরা  এমনকি চামড়ার বেল্ট পর্যন্ত ভিতরে নিয়ে যাওয়া নিষেধ ।  

আমাদের পরের দিনের ভ্রমণ শুরু হলো উদয়গিরি ও খণ্ডগিরি গুহাদয় ভ্রমণের মধ্য দিয়ে । তবে এবার আর সিএনজি নিয়ে নয় , ট্যাক্সি ক্যাব নিয়ে । ইতিহাস, স্থাপত্য আর ধর্মীয় দিক দিয়ে গুরুত্বপূর্ণ উদয়গিরি ও খণ্ডগিরির গুহাসমূহ পাশাপাশি দুটি পাহাড় কেটে তৈরি করা । এখানে আমরা একজন গাইডের সাহায্য নিয়েছিলাম । ওনার কাছেই জানতে পারি, রাজা খরবেলা জৈন সাধুদের সাধনপীঠ হিসেবে এই গুহাসমুহ তৈরি করেন । তৎকালীন সময়ের সেই স্থাপত্য ভাবনা দেখলে বিস্মিত না হয়ে পারা যায় না । উদয়গিরিতে মোট আঠারোটি আর খণ্ডগিরিতে পনেরোটি গুহা রয়েছে । গুহাসমুহ যে জৈন সাধুদের জন্যেই তৈরি, তা সেগুলোর গায়ের কারুকাজ দেখেই খানিকটা আঁচ করা যায় । এখানের গাছগুলোতে প্রচুর বাঁদর রয়েছে । তাই হাতের ক্যামেরা আর চশমা সাবধানে রাখা খুব জরুরী ।

পরবর্তী গন্তব্য ধবলগিরি । দয়া নদীর তীরে অবস্থিত এই ধবলগিরিতেই সম্রাট অশোকের স্মৃতি বিজড়িত কলিঙ্গ যুদ্ধ সংঘটিত হয়েছিলো । বর্তমানে এখানে স্থাপিত হয়েছে পীস প্যাগোডা যেটি শান্তিস্তুপ নামেও পরিচিত । ধবলগিরি যাবার পথটিও সুন্দর । দুইপাশে অজস্র কাজু বাদামের গাছ সহজেই দৃষ্টিকে আকৃষ্ট করে ।

এবারের গন্তব্য শহর থেকে অনেকখানি বাইরে; ভারতের দ্বিতীয় বৃহত্তম চিড়িয়াখানা নন্দনকানন । এটি বিখ্যাত এখানকার হোয়াইট টাইগার সাফারির জন্য । এর পাশাপাশি লায়ন সাফারি আর তৃণভোজীদের জন্যেও আলাদা সাফারি রয়েছে । তবে আমার ব্যাক্তিগত মতামত, গাজীপুরে অবস্থিত বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্কের সাফারি এর চেয়ে সুন্দর। গাইড না নিয়ে ঘুরলে নন্দনকাননের বিশাল এলাকায় পথ হারাবার সম্ভাবনা প্রবল । আমরা ঢুকেই ১৫০ রুপি দিয়ে গাইড নিয়েছিলাম । ফলে দু ঘন্টার মাঝেই পুরো নন্দন কানন ঘুরে বেড়িয়ে আসা সম্ভব হয়েছিলো।  

আমাদের ড্রাইভার এর পাশাপাশি পুরো ভুবনেশ্বর শহর ঘুরিয়ে দেখিয়েছিলো। উড়িষ্যা স্টেট মিউজিয়াম, প্ল্যানেটরিয়াম, ইউনিভার্সিটিসহ বেশ কিছু জায়গা । ভুবনেশ্বর শহরটি একদম ঝকঝকে তকতকে, নেই তেমন কোন যানজট । রাস্তা ঘাট আর বাড়িঘর অত্যন্ত পরিষ্কার আর নতুন । আর বেড়াতে গেলে শপিংয়ের কথা তো ভুলে গেলে চলে না । সেদিনের বিকেলটা একটু আধটু শপিং এর জন্য রাখা ছিলো। পুরো ভুবনেশ্বর শহর জুড়ে নামীদামী ব্র্যান্ডের দোকানের অভাব নেই; রয়েছে বড় বড় শপিং মল । এখানকার সবচেয়ে নামকরা শপিংমল এসপ্ল্যানেড; সবরকম ভালো ব্র্যান্ডের দোকানই রয়েছে এখানে । পাশাপাশি পাল হাইটস , ভুবনেশ্বর সেন্ট্রাল প্রভৃতি জায়গাগুলোও শপিং এর জন্যে মন্দ নয় । আর  তুলনামূলক সস্তা ও কম দামে শপিং করতে চাইলে মার্কেট বিল্ডিং সবচেয়ে ভালো । খাবারের জন্য ডালমা, ভেনাস ইন, হরেকৃষ্ণ রেস্টুরেন্ট প্রত্যেকটিই ভালো লেগেছে । তবে নন ভেজ খাবারের চেয়ে উড়িষ্যায় ভেজ খাবার ট্রাই করাই ভালো ।

শপিং শেষে মিশনের গেস্ট হাউজে ফিরে গেলাম। ড্রাইভারকে সেদিন রাতেই বলে রেখেছিলাম। পরেরদিন খুব সকালেই পুরীর উদ্দেশ্যে রওনা হবো। সেই গল্প নিয়ে হয়ত ফিরে আসবো আরেকদিন, আরেক সময় ।  

 

যেভাবে যাবেনঃ

প্লেন, বাস বা ট্রেন যে কোন সুবিধামত মাধ্যমে কলকাতা গিয়ে ট্রেনে বা প্লেনে ভুবনেশ্বর যাওয়া যায় । একটু আগে থেকে কেটে রাখলে ৩০০০ থেকে ৩৫০০ রুপির মধ্যেই প্লেনে রাউন্ড ট্রিপের টিকেট পেয়ে যাবেন ।

যেভাবে ঘুরবেনঃ
ভুবনেশ্বর শহর ঘোরার জন্য ওলা বা উবার ব্যবহার করতে পারেন । ওলাতে সিএনজিতে ঘুরতে পারবেন যা বেশ সস্তা। তবে সে ক্ষেত্রে ইন্ডিয়ান সিম কার্ড থেকে ওলা ও উবার অ্যাকাউন্ট খুলতে হবে । আর সারাদিনের জন্য ট্যাক্সি ক্যাব বুক করে নিলে ২০০০ রুপির মাঝেই পুরো শহর ঘুরে ফেলতে পারবেন ।

টিপসঃ

১. ভুবনেশ্বরে সবাই ওড়িয়া ভাষায় কথা বলে। তবে হিন্দী সবাই খুব ভালো বোঝে। হিন্দী জানা থাকলে সুবিধা পাবেন।

২. এয়ারপোর্ট থেকে প্রিপেইড ট্যাক্সি নিবেন না। অসম্ভব বেশি দাম নেয়।

৩. উড়িষ্যার কুইজিন ভারত বিখ্যাত। খাবারের জন্য ডালমা, ভেনাস ইন, হরেকৃষ্ণ রেস্টুরেন্ট প্রত্যেকটিই ভালো লেগেছে । তবে নন ভেজ খাবারের চেয়ে উড়িষ্যায় ভেজ খাবার ট্রাই করাই ভালো।

৪. ভুবনেশ্বরে মার্কেট বিল্ডিং এ শপিং করে মজা পাবেন। অত্যন্ত সস্তায় ভালো জিনিস পাবেন।

৫. বাজেট ট্যুরের জন্য উড়িষ্যা বেশ ভালো একটা অপশন। সমুদ্র, পাহাড়, স্থাপত্য, ইতিহাস, খাবার সবকিছুর স্বাদ পাবার জন্য উড়িষ্যা ঘুরে আসতে পারেন।

 

Meet the Blogger

Sushanto Kumar Saha


Name- Sushanto Kumar Saha
Profession- Student of Biomedical Engineering at BUET
City- Dhaka, Bangladesh
Hobbies- Traveling, Quizzing, Music
Previous Tours-
India - Meghalaya – Shillong, Cherrapunji, West Bengal – Kolkata, Darjeeling, Kalimpong, Tripura – Agartala, Assam – Guwahati, Tamil Nadu – Chennai, Delhi – New and Old Delhi, Bihar – Gaya, Nalanda, Rajgir, UP – Agra, Mathura, Vrindaban, Varanashi, Kerala – Kochi, Munnar, Alleppey, Periyar, Kovalam,    Andaman and Nicobar Islands – Port Blair, Havelock & Neil Island, Bangladesh – Around 50 Districts of Bangladesh, Nepal – Kathmandu, Pokhara, Nagarkot, Indonesia- Bali, Singapore – Singapore City



You may also like