Tripsee Treks  and Tours LLP
Blog and Travel with Us

সিলেট ভ্রমন || বাংলাদেশ



Mahmudur Rahman Anik Mahmudur Rahman Anik

সিলেট বিভাগটি যে কত সুন্দর সেটা আপনি পরিপূর্ণ ভাবে দেখতে চাইলে কমপক্ষে ৮-১০ দিন থাকতে হবে। এর আগেও আমার সিলেটের বিভিন্ন জায়গা দেখা হয়েছে তবে এবার সময় সল্পতার কারনে একটি ডে ট্যুর দিয়েছি, তো এবার আপনাদেরকে দেখাবো ভারতের মেঘালয়া ঘেষা রাতারগুল,বিছানাকান্দি,পান্থুমাই... ইত্যাদি।

ভ্রমন বিস্তারিত : ভ্রমন প্লানের জন্য নেট এবং বিভিন্ন ট্রাভেল রিলিটেড গ্রুপ থেকে সাজেশন নিয়ে ১ দিনের একটা ট্যুরের প্লান সাজিয়ে ফেললাম, যেহেতু আমরা ৯ জন শিওর ছিলাম সেহেতু আমরা ৩ জন কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন থেকে রাতের উপবন এক্সপ্রেসের টিকেট কেটে ফেললাম, শোভন চেয়ার শেষ হয়ে গিয়েছিলো তাই সুধু শোভন কেটে নিলাম। সময় মতো সবাই রাত ৯ টার মধ্যেই কমলাপুর এসে পড়লাম, ট্রেনের মধ্যেই আমাদের এক পরিচিত লেগুনা ড্রাইভার ছিলো তার সাথে কথা বলে একদিনের জন্য রিজার্ভ করলাম ২৭৫০ টাকায় রাতারগুল-বিছানাকান্দি-পান্থুমাই-চা বাগান-মাজার শেষে রাতে ঢাকায় ব্যাক করার বাস কাউন্টারে নামিয়ে দিবে, তো ভোর ৬-১০ এ আমরা সিলেট স্টেশনে পৌছে যাই।

সেখান থেকে ড্রাইভার আমাদের পাঁচ-ভাই রেস্টুরেন্টে নিয়ে যায়, যেটা বলা চলে সিলেটের ঐতিহ্যবাহী রেস্টুরেন্ট, সেখান থেকে ব্রেকফাস্ট এবং ফ্রেস হয়ে বেরিয়ে পড়লাম রাতারগুল যাওয়ার উদ্দেশ্যে, সকাল ৯-১০ এ পৌছে গেলাম রাতারগুল ঘাটে, ঘাটে নেমেই আমাদের ড্রাইভার এর সাথে কথা বলে ২ টা নৌকা ঠিক করলাম ১৬০০ টাকায় সাথে মাঝির ১০০ টাকা বকশিস। রাতারগুল ঘুরে চলে গেলাম পিরের বাজার যেখান থেকে আমাদের ট্রলার ভাড়া করে পান্থুমাই এবং বিছানাকান্দি যেতে হবে। অনেকক্ষন মাঝিদের সাথে তর্ক-বিতর্ক করে সর্বশেষ ১৮০০ টাকায় একটা বড় ট্রলার ভাড়া করলাম,সাথে আরও অন্য একটা গ্রুপ ৬ জন যোগ হয়েছে ঘাট থেকে।

দুপুর ১-৩০ এর দিকে পান্থুমাই পৌছে গিয়েছি আমরা, সেখানে গিয়ে ১০০ টাকা দিয়ে ছোট নৌকা ভাড়া করে পান্থুমাই ঝরনার কাছে যাওয়া যায়, যেটা ভারতে বড়হিল ঝর্ণা বলে, এক নৌকায় ৩ জন যাওয়া যায়, সেখানে কিছুক্ষন সময় দিয়ে চলে গেলাম বিছানাকান্দি, কারন পান্থুমাই থেকে বিছানাকান্দির প্রায় ১ ঘন্টা লাগে। বিছানাকান্দি গিয়ে দুপুরের লাঞ্চ শেষ করে ঠান্ডা স্বচ্ছ পানিতে গোসল করে নিলাম, পানি এতো ক্লিয়ার ছিলো যে পানির নিচে মাছ দেখা যাচ্ছে। গোসলের পর সারাদিনের ক্লান্তি ভাবটাও চলে গেল। প্রায় ২-৩০ মিনিট বিছানাকান্দি থেকে বিকেল ৫ টার দিকে রওনা করলাম ঘাটে আসার জন্য,ঘাটে এসেই লেগুনায় উঠে পড়ে সিলেট শহরের উদ্দেশ্যে রওনা করলাম, যাওয়ার পথে অনেক চা বাগান পড়ে, ইচ্ছে করলে নেমে ছবি তুলে যেতে পারেন। সন্ধ্যা ৭-৩০ এ পৌছে গেলাম হজরত শাহজালাল (রঃ) এর মাজার এর কাছে, জিয়ারত করে চলে গেলাম রাতে  টিকেট কাটার জন্য, মাজারের পাশেই শ্যামলীর টিকেট কাউন্টার আছে, সেখান থেকে রাত ১২ টার টিকেট কেটে সোজা চলে গেলাম পাঁচ-ভাই রেসটুরেন্টে, সেখান থেকে খেতে খেতে প্রায় ১১-৩০ বেজে গিয়েছে,খেয়েই বাস কাউন্টারে চলে গেলাম, রাতে সিলেট রোডের কোথায় যেনো কাজ করতে ছিলো তাই সকাল ৮-৩০ এ ঢাকা এসে পরেছি।

যেহেতু আমরা সময় সল্পতার জন্য ডে প্লান করেছি, চাইলে আপনারা সপ্তাহ খানেক সময় নিয়ে পুরো সিলেট এক্সপ্লোর করতে পারেন। আপনারা যারা ইন্ডিয়া থেকে আসার জন্য আমন্ত্রিত তাদের জন্য নিচে কিছু প্লান সাজেস্ট করছি।

মূলত সিলেট বিভাগের যে জেলা গুলোতে বেশি ট্যুর দেয়া হয় সেগুলা অত্যন্ত প্রাকৃতিক সুন্দর নিচে প্লান মতো সাজিয়ে দিচ্ছি।

ডে ১ = রাতারগুল,পান্থুমাই,বিছানাকান্দি।
ডে ২ = জাফলং,লালাখাল,সংরামপুঞ্জি ঝর্ণা। 
ডে ৩ = কোম্পানিগঞ্জ, ভোলাগঞ্জ সাদা পাথর।

ডে ৪ = সুনামগঞ্জের বারকে টিলা,যাদুকাটা নদী,শিমুল বাগান।
ডে ৫ = লাকমাছড়া,নিলাদ্রী লেইক,টাঙ্গুয়ার হাওড়।

ডে ৬ = লাউয়াছড়া ( খাসীয়া পল্লী ), মাধবপুর লেক, বিভিন্ন চা বাগান, বাইক্কা বিল, মনিপুরি পাড়া, রাবার বাগান, বিভিন্ন আনারস বাগান, নীলকণ্ঠ ক্যান্টিনে সাত কালার চা। 
ডে ৭ =  ট্রেকিং করে হামমাম ঝর্ণায় যেতে পারেন, যাওয়া-আসা মিলিয়ে ৬ ঘন্টার বেশি লাগবে।

আমি আপাতত ৭ দিনের প্লান দিলাম, কারন আরো অনেক জায়গা আছে যেগুলা আমি নিজেই যাইনি এখনো....।

ট্রান্সপোর্ট 

ওপরে ডে ১,২,৩ এর জন্য প্রাইভেট গাড়ি অথবা লেগুনা ভাড়া করে সেই প্লেস গুলোতে যেতে পারবেন,নির্ভর করছে গ্রুপের ওপর, ১-৫ জন হলে এক সিএনজি ভাড়া করে ঘুরতে পারবেন, ৫ এর অধিক হলে লেগুনা ভাড়া করে ঘুরতে পারবেন, চাইলে নোয়া,হাইচ প্রাইভেট গাড়ি ভাড়া করেও ঘুরতে পারবেন সেক্ষেত্রে টাকা কিছুটা বেশি লাগবে।

ডে ৪,৫ এর জন্য আগে সিলেট শহর থেকে সুনামগঞ্জ টেকেরঘাট বাসে যেতে হবে, সেখান থেকে দুইদিনের জন্য গ্রুপ বুঝে ট্রলার ভাড়া করে ঘুরতে হবে নির্ধারিত প্লেস গুলোতে, সব থেকে ইন্টেরেস্টিং ব্যাপার হচ্ছে কি জানেন.? আপনাকে ট্রলারের মধ্যেই খাওয়া-দাওয়া এবং ঘুমাতে হবে, আপনার নিজের বাজার সদাই করে ট্রলারের বাবুর্চিকে দিবেন তারাই রান্না করে দিবে, হাওড়ের মাঝে ট্রলারের মধ্যে ঘুমাবেন আহা কি মজা..! আসলে ভাই এইগুলা বলে ফিল পাওয়া যায় না উপভোগ করতে হবে এসে, আর ঘুমানোর জন্য এনাফ জায়গা আছে ট্রলারে, সবকিছুই আছে ট্রলারে নো ওয়ারিস।

ডে ৬,৭ এর জন্য সুনামগঞ্জ থেকে শ্রীমঙ্গল যাওয়ার জন্য বাস আছে সমস্যা নেই, শ্রীমঙ্গল নেমে সিনএনজি ভাড়া করে নির্ধারিত জায়গায় ঘুরতে পারবেন, সদস্যর ওপর নির্ভর করবে কিভাবে ঘুরবেন। 

হোটেল খরচ

ডে ১.২.৩ এই তিন দিনের জন্য সিলেট শহরে মাজারের পাশে হোটেল ভাড়া করতে পারেন, যেখান থেকে গাড়ি ভাড়া করবেন এর আসে-পাশে প্রায় শ-খানেক হোটেল আছে, সিজন ভেদে দাম উঠানামা করে। এই ধরেন ১০০০-১০,০০০ পর্যন্ত আছে, খুব উন্নত মানের হোটেল আছে সিলেটে সেটা নিয়ে সমস্যা নেই। 

ডে ৪,৫ জন্য হোটেল ভাড়া প্রয়োজন নেই, ট্রলারে ঘুমাতে হবে, চাইলে সুনামগঞ্জে হোটেল ভাড়া করে যায় সেক্ষেত্রে আসল মজাই নষ্ট হয়ে যায়, তাই আমি প্রেফার করি ট্রলার বেস্ট,

ডে ৬,৭ এর জন্য শ্রীমঙ্গলে অনেক হোটেল আছে, যেমন ইউনাইটেড, টি টাউন এগুলোতে সবচেয়ে কমদামে থাকতে পারবেন মহসিন প্লাজা,স্কাইপার্ক মিডিয়াম মানের। আর যদি লাক্সারি রিসোর্টের খুজেন 
গ্র‍্যান্ড সুলতান,দুসাই আছে সেগুলার ভাড়া প্রায় ১৫,০০০ টাকা। 

খাওয়া-দাওয়া 

ডে ১,২,৩ এর জন্য সিলেটের ঐতিহ্যবাহী পাচঁ ভাই, পানশি হোটেলে খেতে পারবেন, সস্তা এবং খাবারের মান অনেক ভালো।

ডে ৪,৫ এর জন্য ট্রলারের খেতে হবে, মাঝিরাই সব ব্যবস্থা করবে রান্না-বান্নার।

ডে ৬,৭ এর জন্য অনেক হোটেল আছে, পাচঁ ভাই,পানশির শাখা আছে চাইলে সেখানেও খেতে পারেন।

এবার আসি অন্যান্য কিছু খরচ নিয়ে ___

সিএনজি ডে প্রতি ভাড়া ১৫০০-২০০০ এর মধ্যে, নির্ভর করবে আপনার বারগেটিং এর ওপর। এমন ভাবে কথা বলবেন যেন আপনি ওখানকার স্থানীয় নাহলে গলা কাটা দাম চাইবে। এক সিএনজিতে ৪-৫ জন বসা যায়।

লেগুনা ভাড়া ২৭০০-৩২০০ এর মধ্যে, এক লেগুনায় ৮-১০ জন বসা যায়। সেটাও বারগেটিং এর ওপর নির্ভর করে।

রাতারগুল নৌকা ভাড়া ৭০০ টাকা, বিছানাকান্দি ট্রলার ভাড়া সাইজ ভেদে দাম ১২০০-২০০০ টাকা, ট্রলার ভেদে ১০-২৫ জন বসা যায়।

সুনামগঞ্জের ট্রলার ভাড়া সাইজ ভেদে ৪০০০-৮০০০ টাকা এর মধ্যে দুইদিনের ভাড়া + বাবুর্চি খরচ...।

মেইন খরচঃ

কলকাতা থেকে ঢাকাগামী ট্রেন,বাস,প্লেন,শীপ মোটামুটি সব ভাবেই আসা যায়, আমরা বাঙালি পারি না পায়ে হেটেও যাই,হাহাহাহাহাহা..!!

এবার ও আগে বড়লোক্স ট্রাভেলার্স দের বিবরন দেই তারপর নাহয় আমার মতো ব্যাকপ্যাক ট্রাভেলার্স এর বিবরন দিবো।

কলকাতা-ঢাকা-কলকাতা প্রতিদিন প্রায় ৮ টা ফ্লাইট পরিচালনা করে। যেমন : স্পাইজেট,ইন্ডিগো,এয়ার ইন্ডিয়া,বিমান বাংলাদেশ,নভোএয়ারের আরো বিভিন্ন ফ্লাইট আছে, সেখানে রাউন্ডট্রিপ প্রায় ১০ হাজার পরবে। ঢাকা-সিলেট-ঢাকা বিমান ভাড়া প্রায় ৫৫০০ সামথিং।

ঢাকা থেকে নামি-দামি অনেক বাস সিলেট যায় চাইলে৷ সেগুলাতেও ট্রাই করতে পারেন, গ্রিন লাইন,এনা,হানিফ,লন্ডন এক্সপ্রেস,শ্যামলী,

ভাড়া এসি বিজনেস ক্লাস সাথে বুফে খাবার ভাড়া ১২০০-১৫০০ টাকা। 

এবার আসি আমার মতো ব্যাকপ্যাক ট্রাভেলার্স দের হিসাব নিয়ে,

কলকাতা থেকে ঢাকাগামী বহু বাস আছে, শ্যামলী,সোহাগ,রোয়েল,সৌহার্দ,গ্রিন লাইন,ইত্যাদি,

নন এসি ৮০০-১২০০ টাকা, আর এসি ১৬০০-২২০০ টাকা। যদি আরো কমে যেতে চান সেই ব্যাবস্থা ও আছে শিয়ালদহ থেকে ট্রেনে বনগাঁর থেকে বেনাপোল হয়ে লোকাল ভাবে আসতে পারেন তবে একটু আরাম আয়েসে আসতে চাইলে কলকাতার চিতপুর থেকে মৈত্রি এক্সপ্রেস ট্রেনে আসতে পারেন, ভাড়া ওখান থেকে মনে হয় ১৭০০ রুপি।

তারপর ঢাকা থেকে বাই ট্রেনে অথবা নন এসি বাসে যেতে পারেন সিলেট, ট্রেন ভাড়া শোভন চেয়ার ৩৬০ টাকা,এসি চেয়ার ৪৮০ টাকা এবং বাস ভাড়া নন এসি ৪৬০-৫০০ টাকা।

​এছাড়া আপনারা চাইলে গৌহাটি হয়ে ডাউকি বর্ডার দিয়ে সিলেটে আসতে পারেন। এভাবে মনে হয় সময় বেশি লাগবে, তবে আমার ঠিক জানা নেই ওতটা এই রুট সম্পর্কে। 

ওপরের সব হিসাব টাকায় দেয়া,রুপিতে কনভার্ট করলে অনেকটাই কম হবে আপনাদের ক্ষেত্রে।

আরো কিছু জানতে চাইলে কমেন্ট অথবা ইনবক্স করুন যতটুকু পারি অতিথি আপ্যায়ন করবো, ধন্যবাদ..!!

আমি কোন লেখক না তাই বানানের মধ্যে কোন ভুল-ভ্রান্তি হলে ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।

বিঃদ্রঃ আমার তোলা পিক গুলো সুধু একদিনের ট্যুরের, এখন আপনারাই ভেবে নিন বাকি জেলা গুলো আরো কতটা সুন্দর হতে পারে...!! চাইলে আমার কালারস অফ সিলেট এলবাম টি শেয়ার করতে পারেন, তাতে কোনো সমস্যা নেই।

আর হ্যাঁ, যেখানে সেখানে কোনো প্রকার ময়লা আবর্জনা, চিপসের প্যাকেট এবং পানির বোতল ফেলা থেকে বিরত থাকি।