Tripsee Treks  and Tours LLP
Blog and Travel with Us

The Deccan Trail Part 1



Pratik Mukherjee Pratik Mukherjee

প্রথম পর্ব দক্ষিণের আগ্রা - বিজাপুর

দক্ষিণের আগ্রা - বিজাপুর

এবারের ট্রিপটা ঠিক কি ছিলো জানিনা কিন্তু কোনো এঙ্গেলে সাইক্লোনের চেয়ে কম নয় l সাধারণত এতটা কম্প্যাক্ট রেস্টলেস প্ল্যান আমি করিনা কিন্তু এবারে সময়ের অত্যন্ত অভাবে এই হারিকেন ট্যুর করতে হয়েছিলো l
যদি বলো কেন? তবে বলি রুট ম্যাপ শোনো : বেঙ্গালুরু পৌঁছে সেদিন সন্ধেয় ট্রেন ধরে পরের দিন সকালে বিজাপুর পৌঁছে সারাদিন ঘুরে সেদিন বিকেল আবার ট্রেন ধরে বাদামি পৌঁছে রাতে হোটেলে ঘুমিয়ে পরের দিন সকাল থেকে বাদামি, পট্টডাকাল, আইহোলে ঘুরে সন্ধেয় আবার ট্রেন ধরে পরের দিন সকালে ব্যাঙ্গালুরু পৌঁছে বেলার দিকে ফ্লাইট ধরে বিকেলের দিকে কলকাতা ফিরে আসা l
হাঁপিয়ে গেলেন তো পড়তে গিয়ে? সে হাঁপান, শুধু ঘুরতে গিয়ে না হাপালেই হলো l
অনেকে ভাবতেই পারে হটাৎ এভাবে কেন? আসলে একটা কাজে বেঙ্গালুরু যাওয়া, শেষ যেদিন কাজ ছিলো, সেদিনই আমি সন্ধেবেলা বিজাপুর উদ্দেশ্যে রওনা দেই l মানে লাগেজ নিয়ে সকালবেলা কাজে চলে যাওয়া, সারাদিন কাজ শেষে বিকেলে বিজাপুর উদ্দেশ্যে দে দৌড় !! রাতে ট্রেনে এমনিও ভালো ঘুম হয়না, কিন্তু ওই গা ম্যাজম্যাজ নিয়ে বিজাপুর ঘুরতে উৎসাহ এক ফোটাও কমেনি l
এই প্ল্যান যারা বেঙ্গালুরুতে থাকে তাদের জন্য উইকেন্ড ইস্পেশাল ট্রিপ হতে পারে, বা যারা অন্য কোনো কারণে বেঙ্গালুরুতে যাচ্ছে তারাও করে নিতে পারবে, কিন্তু যারা পুরো বেড়াতে যাবার প্ল্যানে যাবে তারা একটু রয়ে সয়ে আরো একটা দুটো জায়গা পাঞ্চ করে নিয়ে যেতে পারেন l সেটা আমি অল্টারনেট প্ল্যানে লিখে দিচ্ছি l
যদি ইতিহাস ভালোবাসেন, স্থাপত্য যদি আপনাকে আকৃষ্ট করে তাহলে মধ্য এবং উত্তর কর্ণাটক আপনার জন্য আদর্শ জায়গা l হিন্দু স্থাপত্যের পাশে পাবেন ইসলামিক ইমারত... একদিকে চালুক্য তো অন্যদিকে বাহামনি l
আর আমি এইবারের ট্রিপে এই চালুক্য আর বাহামনি কে এক থালায় এনে ফেলেছিলাম l

বিজাপুর আক্রমণ

যশবন্তপুর স্টেশনে বসে আছি ট্রেনের অপেক্ষায় l গোল গুমবাজ (গম্বুজ ) এক্সপ্রেস l বেঙ্গালুরু এস বি সি ( মেন স্টেশন ) হয়ে যশবন্তপুর স্টেশনে ট্রেন এলো রাত সাতটা চল্লিশ নাগাদ l এদিকে আসার কথা ছিলো সন্ধে সাতটা দশ l ছোট একটা ডিজেল ইঞ্জিন ভস ভস করে ট্রেনটা টেনে এনে দাঁড়ালো l এই সব রুটে নন এ সি তে হেসে খেলে যাওয়া যায় তাই এ সি নিয়ে টাকা খরচের মানে নেই l ভাবছেন গরম লাগবে? বিশ্বাস করুন গ্রীষ্মকালেও রাতে জার্নি করলে লাগেনা l গতবছর মে মাসে আমি হাম্পি গেছিলাম, গরম লাগেনি একটুও রাতে আর এই বছর তো বর্ষাকালে গেলাম l হালকা ঝিরি ঝিরি একটা বৃষ্টি হয় ব্যাঙ্গালুরুতে, তারপরেই একটা ঠান্ডা হাওয়া দেয়, ব্যাস আপনি জমে কুলফি l
ট্রেনে উঠে দেখি প্রায় ফাঁকা ট্রেন l উল্টো দিকে এক কাকিমা গোছের বসে আর আমার পাশে এক মাঝবয়সী ভদ্রলোক l ট্রেন চলতে শুরু করার একটু পরেই কাঁচ নামিয়ে দিলাম l একটা পাতলা টি পড়ে কনকনে ঠান্ডা হাওয়া নেওয়া যাচ্ছিলো না l কাকিমার সাথে আলাপ হওয়াতে তার কথাবার্তায় জানলাম বিজাপুরে ভাষার সমস্যা নেই l সবাই ভালোমতো হিন্দি বোঝে আর বলতে পারে l উনি নিজেও হিন্দি, মারাঠি, কন্নড ভাষায় সাবলীল l নামেই কর্ণাটক l আসলে এটা মহারাষ্ট্রর বর্ডার l কারণ বিজাপুরের পরেই ট্রেন মহারাষ্ট্র ঢুকে শোলাপুরে গিয়ে গ্যাট মেরে দাঁড়িয়ে যাবে l ওটাই শেষ স্টেশন l
মাঝরাতের দিকে তাও কিছু লোকজন উঠেছিল l সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখি ট্রেন প্রায় ধু ধু করছে l জানলা কাকিমা অলরেডি খুলে দিয়েছে, হু হু করে হাওয়া দিচ্ছে l আসে পাশে সেরকম পাথুরে টিলা দেখা যাচ্ছেনা, একদম সমতল ভূমি...চারদিকে চাষবাস চলছে l
কাকিমাও ব্যাগ ট্যাগ গোছাতে শুরু করছে দেখে আমি ঝটপট ব্রাশ করে হাত মুখ ধুয়ে ফ্রেশ হয়ে গেলাম l ট্রেন সকাল 9.20 তে পৌঁছাবার শিডিউল টাইম কিন্তু পৌছালো গিয়ে সাড়ে নটায় l মানে রাতে ভালো মেক আপ করেছে l নেমেই স্টেশনে গরম গরম ইডলি খেয়ে নিলাম l নরম তুলতুলে সেই ইডলি l কলকাতার মতো চ্যাটচ্যাটে আঠা আঠা জালি ইডলি নয় l তিনটে ইডলি 20 টাকা l জন আহার ছিলো মনে হয় l
পরের কাজ হলো লাগেজ ক্লোকরুমে গ্যারেজ করে দিয়ে ক্যামেরা নিয়ে ঘুরতে বেরিয়ে পরা l 24 ঘন্টার জন্য মাত্র 20 টাকা l লাগেজ নেয়ার সময় টাকা দিতে হবে l আর লাগবে আপনার টিকিটের PNR নম্বর l তবে এখানের ক্লোকরুম মানে একটা ছোট ঘর যেখানে একটা টেবিল আছে, সেখানেই রুকস্যাক রেখে দিলাম l আমার ছাড়া কারোরই লাগেজ দেখলাম না l
বিজাপুরের সাইটসিইং করার দুটো উপায় আছে l এক হলো টাঙ্গা আরেক হলো অটো l টাঙ্গা নিলে সময় বেশী লাগবে, টাকাও বেশী নেবে, 800 মতো l অটো নেবে 600- 650 টাকা l যদি সংগীত মহল আর ষাট কবর দেখতে চান তাহলে অটো নেওয়া ভালো কারণ এই দুটো জায়গা শহরের অনেকটা বাইরে l আমি অটো নিয়েছিলাম কারণ আমার সেদিনকেই বিকেলে ট্রেন ধরার ছিলো, সময় কম l
স্টেশন থেকে বেরিয়েই যেটা প্রথম চোখে পড়বে সেটা হলো গোল গম্বুজ l মাথার গোল উল্টানো বাটির মতো চুড়ো বেশ ভালো ভাবে দেখা যায় l একদম কাছে লাগলেও হেঁটে বেশ খানিকটা যেতে হয় l এটা বিজাপুরের আইকনিক স্থাপত্য, দক্ষিণের তাজমহল নামেও পরিচিত l বিজাপুর মানেই এটার ছবি দেখতে পাবেন সব জায়গায় l এমনকি ট্রেনের নাম একেই ডেডিকেট করা l
অটোওলার সাথে দরাদরি চললো, শেষে 650 টাকায় রাজি করাতে পারলাম l আপনারা পারলে 600 তে নামাতে পারেন l
 

এক চিলতে বিজাপুরের ইতিহাস :

ইতিহাস বলতে শুরু করলে তো শেষ হয় না, এই কথা ওই কথায় জল অনেক গড়িয়ে যাবে l তাই ছোট করে বলে দিচ্ছি l চালুক্য, রাষ্ট্রকুট, কলচুরি, হয়সালা হয়ে বিজাপুর আসে বাহমনি সুলতান বংশের হাতে l বলা যায় দক্ষিণ ভারতের স্বাধীন মুসলিম রাজ্য ছিলো এই বাহমনি সাম্রাজ্য l বাহমনি সাম্রাজ্যের পতনের পর পাঁচটি ভাগে ভেঙে যায় আর আদিল শাহের ভাগে পরে বিজাপুর l প্রায় স্বাধীনভাবেই বিজাপুর রাজত্ব করে ইউসুফ আদিল শাহ, ইব্রাহিম আদিল শাহ, আলী আদিল শাহ প্রমুখ l আলী আদিল শাহ বিজাপুরের প্রভূত উন্নতি ঘটায়, পরিখা বেষ্টিত করে শহরের সুরক্ষাস্বার্থে l আর এখন যা স্থাপত্য দেখা যায় তার অধিকাংশ হয় মহম্মদ আদিল শাহ এবং দ্বিতীয় আলী আদিল শাহের আমলে l গোল গম্বুজ মহম্মদ আদিল শাহের আমলে তৈরি হয় l এই দুই সুলতানের আমলে বিজাপুর দক্ষিণের বেশ শীর্ষ স্থান দখল করে নেয় l বলা হয় দক্ষিণের আগ্রা মানেই বিজাপুর l পানীয় জলের সুব্যবস্থা থেকে শুরু করে হাসপাতাল, বাজার, শিক্ষা, নাগরিক জীবনের প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা সুষ্ঠভাবে ছিলো এই শহরে l তবে শেষ দিকে দ্বিতীয় আলী আদিল শাহ একদিকে মারাঠা অন্যদিকে মুঘলদের সামলাতে হিমশিম খেতে খেতে মারা যান আর বিজাপুর এসে পড়ে মুঘল সম্রাট ঔরঙ্গজেবের হাতে l মৃত্যুর কারণে অর্ধ নির্মিত বরা কামানে দ্বিতীয় আলী আদিল শাহ সমাধি হয় l বিজাপুর মুঘলদের হাতেও বেশিদিন থাকতে পারেনি l মুঘলদের আসন্ন পতনের সময় বিজাপুর চলে আসে হায়দরাবাদি নিজামের হাতে কিন্তু বেশিদিন রাখতে পারেনা মারাঠা রাজের দাপটে l মারাঠা পেশোয়াদের হাত থেকে শেষে ব্রিটিশদের হাতে এসে এই হাত বদলের খেলা শেষ হয় l তবে বিজাপুরের যা কিছু দ্রষ্টব্য তা এই আদিল শাহী শাসনে তৈরি হয় l মুঘল বা নিজামদের কোনো অবদান সেভাবে নেই l
 

বিজাপুরের দ্রষ্টব্য স্থান :

1. জামা মসজিদ

2. জোড় গম্বুজ

 

3. গগন মহল

4. সাত মঞ্জিল ( সরকারি অফিস, ঢুকতে দেবেনা )

5. আসার মহল এবং মিঠারী মহল

6. মেহতার মহল

7. ইব্রাহিম রওজা

8. তাজ বাউড়ি (আত্মহত্যার জন্য গেটে তালা)

 

9. সংগীত নারী মহল

 

10. ষাট কবর

 

11. মালিক -এ - ময়দান ( বিখ্যাত কামান )

 

12. উপলি বুর্জ

 

13. গোল গম্বুজ

14. বারাহ কামান

সকাল সাড়ে দশটার সময় যদি শুরু করেন তাহলে বিকেল সাড়ে চারটের মধ্যে হেসে খেলে শেষ করা যাবে, ইনক্লুডিং আধ ঘন্টার লাঞ্চ ব্রেক l তবে এতগুলো জায়গা? অসুবিধা নেই একমাত্র সংগীত নারী মহল আর ষাট কবর বাদ দিয়ে বাকি সব জায়গা একে অপরের বেশ কাছেই l
গোল গম্বুজের জন্য এক ঘন্টা আপনাকে কম করে হলেও রাখতে হবে l এটা লাঞ্চের পর দেখে বিকেলের ফেরার ট্রেন ধরে নিতে পারবেন l বাকি সব জায়গা লাঞ্চের আগেই হয়ে যাবে l
ষাট কবরের ব্যাপারে কটা কথা বলে দেওয়া দিই, জেনে নেবেন অটোওলা চেনে কিনা, কারণ এটায় খুব কম লোক যায় তাই অটোওলারাও কালক্রমে ভুলে যাচ্ছে l এখানে আফজল খান তার 63 জন স্ত্রীকে হত্যা করে কবর দিয়ে দেয় l আফজল খান ছিলেন দ্বিতীয় আলী আদিল শাহের প্রধান সেনাপতি l তাঁর এক জ্যোতিষী তাকে মারাঠাদের সাথে যুদ্ধের আগে ভবিষ্যৎবাণী করে দেয় তার মৃত্যু অবশ্যম্ভাবী l তাই তিনি তার সব স্ত্রীদের হত্যা করে ফেলে যাতে তারা আবার বিয়ে না করতে পারে l ওইদিকে আফজল খান প্রতাপগড়ে মারাঠা বাহিনী তথা শিবাজীর হাতে সত্যিই মৃত্যু বরণ করেন l
 

খ্যাটন

আমার সব কটা জায়গা আড়াইটে নাগাদ দেখা শেষ হয়ে যায় l বাকি ছিলো শুধু গোল গম্বুজ l বারাহ কামানের সামনে বেশ কয়েকটা খাবারের দোকান আছে l বারাহ কামান অভিমুখে ডান দিকের ফুটে একটা নিরামিষ হোটেলে লাঞ্চ করে নিলাম l নাম হলো যাদেরু সিদ্ধালিঙ্গেশ্বর l হোটেলের নাম না মন্দির আমি একটু কনফুসিয়া গেছিলাম !! অটোওয়ালাই দেখিয়ে দিয়েছিলো l 50 টাকায় পিওর কন্নড থালি l জোয়ারের রুটি, ভাত, পাঁপড়, রসম, সাম্বার, টক দই, আচার, তিনটে আরো তরকারি, আর গুঁড়ো গুঁড়ো কিছু রঙিন চাটনি পাউডার (রান্নার পর ওদের তরকারি আমি কোনোদিনও চিনতে পারিনা এমনকি মুখে দিয়েও কোন সব্জি বুঝিনা ) দিয়ে এই থালি l পেটচুক্তি খাওয়া l যতক্ষণ আপনার পেট ভরবেনা ততক্ষন নিন l দাম সেই 50 টাকাই l (কিন্তু এটা মাথায় রেখে খাবেন যে এরপর গোল গম্বুজের 120টা উঁচু উঁচু খাঁড়া সিড়ি ভেঙে ওপরে উঠতে হবে ) নিরামিষ হলে কি হবে, খেতে বেশ ভালোই লাগে কারণ তরকারিগুলোর স্বাদ বেশ আলাদা l বেশ মৌজসে সব শেষ করে আমি যখন টক দইতে চিনি মিশিয়ে ভাতে মাখছিলাম তখন দেখি উল্টো চেয়ারে বসা এক কন্নড কাকু আমায় গুল গুল করে অবাক চোখে দেখছে, আমিও ততোধিক অবাক হলাম যখন দেখি সে টক দইয়ের সাথে সাম্বার মিশিয়ে ভাত দিয়ে মেখে হাপুত হুপুত করে সাঁটাচ্ছে l কালচার শক আরকি !
যদি মনে করেন সুলতানি জায়গায় সুলতানি খাবেন তাহলে পার্ল হোটেল l বিরিয়ানি আর ফালুদা বিখ্যাত এই হোটেলের l এটা গোল গম্বুজের খুব কাছেই l
যদি মারাঠি থালি খেতে চান তাহলে চলে যাবেন সজ্ঞানবাসভা ভজনালয়, লক্ষী মারাঠা খানাভালি l যদিও আমি মারাঠী থালি পছন্দ করিনা কারণ মুখপোড়া ঝাল দেয় আর তরকারির স্বাদ দক্ষিণী থালির থেকে ভালো নয়, মানে আমার ব্যক্তিগত ভাবে পছন্দ নয় l
মদ্যপানের খোঁজ আমি দিতে পারলাম না, কারণ আমি নিজেই খাওয়া ছেড়ে দিয়েছি তাছাড়া সময়ও পায়নি একটা বিয়ার নিয়ে বসে চিল মারার l তবে কর্ণাটক তো, নিশ্চিন্তে বার পাওয়া যাবে l শুধু একটু গুগলে খুঁজে নেবেন বা অটোওয়ালা কে জিগ্যেস করে নেবেন l
 

রাপ আপ

বিজাপুরে নিশ্চিন্তে অটোওয়ালার হাতে নিজেকে সঁঁপে দিন l সে সব জায়গা ধরে ধরে ঘুরিয়ে দেবে l আর লিস্ট তো আমি করেই দিয়েছি l বিজাপুর ফোর্টকে লিস্টে রাখিনি কারণ সেভাবে ফোর্ট দেখতে পাবেন না l একটা জায়গায় ভাঙা ফোর্টের অংশ দেখতে পাবেন শুধু l ওটাকে বাদ দিলেও চলবে বা চলার পথে একটু দাঁড়িয়ে ছবি তুলে নেবেন দুর থেকে l
গোল গম্বুজ বেশ সময় নিয়ে দেখবেন l সিঁড়ি ভেঙে ওপরে হুইসপারিং গ্যালারি দেখে নেবেন l এটা ভারতবর্ষে খুব কম জায়গায় আছে l এক প্রান্ত থেকে ফিসফিস করলেও অন্য প্রান্ত থেকে পরিষ্কার শোনা যায় l একটা মিউজিয়াম ও আছে গোল গম্বুজের সামনে l
ইব্রাহিম রওজা ভীষণ সুন্দর সমাধিস্থান l ইব্রাহিম আদিল শাহের ও তাঁর স্ত্রী তাজ সুলতানা এখানে সমাধিস্থ l
উপলি বুর্জ বা হায়দার বুর্জে 70টা সিঁড়ি ভেঙে ওপরে উঠে দেখতে পাবেন দুটো কামান আর চার দিক থেকে বিজাপুর শহর l সেটা গোল গম্বুজ থেকে যদিও আরো ভালো ভাবে দেখা যায় l বলা যেতে পারে এটা তখনকার দিনের ওয়াচ টাওয়ার l

ফেরার পালা

সব ঘোরার পর অটোওয়ালা নামিয়ে দিলো স্টেশনের সামনে l তখন দেখি ঘড়িতে বিকেল সাড়ে চারটে বাজে l টাকা মিটিয়ে দিলাম অটোওলা জাভেদ কে l খুবই ভালো ছেলে, জায়গাগুলো ঘোরবার সময় আমার সাথে সাথেই ঘুরছিলো l এবার স্টেশনে গিয়ে 20 টাকা মিটিয়ে লাগেজ নিয়ে নিলাম l ট্রেনের অপেক্ষা এখন শুধু l বিকেল 4.55pm এর ট্রেন লেট করে এলো প্রায় 5.30pm নাগাদ l মানে এই গোল গম্বুজ এক্সপ্রেস অ্যাভারেজ আধ ঘন্টা লেট থাকে বুঝলাম l হ্যাঁ, সকালে এই ট্রেনেই এসেছি l ট্রেনে উঠে দেখলাম সেই খালি, গুটিকতক লোক এদিক ওদিক বসে l ঝেঁপে বৃষ্টি আসছে তখন l জানলার কাঁচ নামিয়ে মোবাইল খুলে বসলাম l এখন গন্তব্য বাদামি.... বাদামি স্টেশন l
 

অল্টারনেট প্ল্যান

যদি মনে করেন বাহমনি সাম্রাজ্য ভালো করে দেখবেন, তাহলে বিজাপুরে রাত কাটান l সেক্ষত্রে প্ল্যানে রাখুন বিদার, গুলবর্গা, বিজাপুর l সেক্ষত্রে ব্যাঙ্গালুরু থেকে ডাইরেক্ট ট্রেনে বিদার চলে যান l সারারাত জার্নি l যদিও বিদার হায়দরাবাদ থেকে খুব কাছে l তাই হায়দরাবাদ থেকেও শুরু করতে পারেন l তিন সাড়ে তিন ঘন্টার জার্নি l বিদার ঘুরে চলে আসুন গুলবর্গা ( স্টেশন নাম কালবুর্গি ) l মাত্র 2টো DEMU চলে l সেই সাড়ে তিন ঘন্টার মতো লাগে l গুলবর্গা থেকে চলে আসুন বিজাপুর l চারখানা ট্রেন আছে l ঘন্টা সাড়ে পাঁচেকের মতো লাগে lএবার বিজাপুর ঘুরে নিয়ে ভাবুন কি করবেন l এই তিনটে জায়গা ঘুরলে আপনার অনেকটাই বাহমানি সাম্রাজ্য কভার করা হয়ে যাবে l ইচ্ছে করলে এবার বাদামি চলে গিয়ে বাদামি, পট্টডাকাল, আইহোলে ঘুরে নিয়ে বাদামি থেকে ট্রেনে করে ব্যাঙ্গালুরু ফিরে যান l তারপর বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দিন l টোটাল আপনার 4-5 দিন লাগবে ঘুরতে l হায়দরাবাদ বা ব্যাঙ্গালুরু পৌঁছানো বাদ দিয়ে বললাম l

 

কী পয়েন্টস

1. বিজাপুর এখন নতুন নামকরণে হয়েছে ভিজয়পুরা l বেঙ্গালুরু থেকে বিজাপুর যাবার ভালো ট্রেন হলো গোল গম্বুজ এক্সপ্রেস ( gol gumbaz express, 16535 ) মাইসোর (MYS) থেকে ছেড়ে কে এস আর বেঙ্গালুরু (বেঙ্গালুরু সেন্ট্রাল স্টেশন আরকি-SBC ) হয়ে যশবন্তপুর (YPR) - 7.10pm হয়ে বিজাপুর (BJP ) - সকাল 9.20 am পৌঁছয় l নন এ সি ভাড়া 375 টাকা, থ্রি এ সি হলো 1020 টাকা l বিজাপুরের নতুন নাম হলো ভিজয়পুরা l আরেকটা ট্রেন হলো বাসাভ এক্সপ্রেস (17307) l এই দুটো ট্রেন প্রত্যেক দিন থাকে এছাড়াও সোমবার সকালে আরো দুটো ট্রেন আছে, আর শুক্র, রবিবার ভোর 5 am এ ট্রেন আছে l

2. বিজাপুরের সব দর্শনীয় স্থান প্রত্যেক দিন খোলা থাকে, এভারেজ সকাল 10am থেকে সন্ধে 6pm অব্দি l ন্যাশনাল হলিডের ব্যাপারটা ঠিক বলতে পারবনা l

3. অবশ্যই শীতকাল হলো ঘোরার ভালো সময় কিন্তু বর্ষাকালে সেরকম বিপদে পড়বেন না l তবে হ্যাঁ মারাত্মক বৃষ্টি হয়ে বন্যা পরিস্থিতি হলে সেটা দুর্ভাগ্য l এমনিতে মুষলধারে বৃষ্টি না হলেও ঝিরি ঝিরি একটা বৃষ্টি হয় l রোদের তাপ বেশ ভালোই আছে দিনের বেলা l কিন্ত খুব হাওয়া দেয়, গরম লু নয়, নির্ভেজাল ঠান্ডা হাওয়া পাবেন l

4. একা সোলো ট্রাভেলের হিসেবে বিজাপুর সেফ জায়গা l মানুষের ব্যবহার ভালো l মেয়েরাও গ্রুপে বা সোলো যেতে পারেন l অটোওয়ালা জাভেদ বলছিলো সে ষাট কবর চিনেছিল একটা মেয়ে সোলো ট্রাভেলার এর দৌলতে l মেয়েটি ওকে জোর করে নিয়ে গেছিলো l ভাষাগত সমস্যা একেবারেই নেই l নিশ্চিন্তে হিন্দি, ইংলিশ বলুন l
5. খাবার দাবার বেশ ভালো l ভাত, রুটির সমস্যা নেই l অনেকেই ভাবে দক্ষিণ মানেই ইডলি, ধোসা l একদমই সেটা নয় l মনে রাখবেন ইডলি, ধোসা ওরা সকালে ব্রেকফাস্টে বা বিকেলের স্ন্যাক হিসেবে খায় l দুপুর বা রাতে ভাত রুটি ছাড়া ওদের চলে না l তবে হ্যাঁ, টক, ঝাল নারকেল তেলে আপনার সমস্যা থাকলে আলাদা ব্যাপার l তরকারি গুলোর স্বাদ একটু অন্যরকম, তবে বেশ লাগে খেতে l বিজাপুরে বিরিয়ানি কিন্তু হায়দেরবাদী স্টাইলে তৈরি l নন ভেজ পাবেন l
6. এন্ট্রি ফী আপনাকে মাত্র দুটো জায়গায় দিতে হবে l ইব্রাহিম রওজা আর গোল গম্বুজে l দুটো জায়গাতেই 25 টাকা করে মাথাপিছু, DSLR, ভিডিও ক্যামেরা থাকলে আরো 25 করে বেশী প্রতি ক্যামেরায় l বাকি কোথাও এন্ট্রি ফী নেই l গোল গম্বুজের সামনে মিউজিয়ামে ঢুকতে আরো 5 টাকা বেশি দিতে হয় l
7. যারা ধূম্ৰপান করেন তারা ভুলেও গোল গম্বুজে সিগারেট, দেশলাই নিয়ে ঢুকবেন না l প্রথম সিকিউরিটি চেক করেনা কিন্তু দ্বিতীয় সিকিউরিটি আদ্যপান্তো চেক করবে l ওখানে না খাওয়ার প্রতিশ্রুতি দিলেও ওরা সিগারেট নিয়ে ঢুকতে দেবে না l তাই অটোওলার কাছে রেখে যান l বাকি কোথাও নিয়ে ঢুকতে বাধা নেই, কিন্তু সেবন করবেন না l

8. গোল গম্বুজের গেটে ক্লোকরুমের সুবিধা আছে, যদি রেলের ক্লোকরুমে লাগেজ রাখতে পছন্দ না হয়, তবে এখানে রাখতে পারেন l কিন্তু যেখানেই রাখুন লাগেজে খাদ্য দ্রব্য রাখবেন না l রেলের লোক সেটা আপনাকে বলেও দেবে l
9. বিজাপুর ঘুরতে আপনার একার মোট খরচ হবে দেড় হাজার টাকার মতো ( নন-এ সি ট্রেন, অটোয় সাইটসিইং, আর নিরামিষ ব্রেকফাস্ট +লাঞ্চ আর পানীয় জল ) এবার দোকা হলে ট্রেনের ভাড়া, খাবার আর জল দুগুন করে নিন l শুধু অটো /টাঙ্গা ভাড়াটা একটাই ধরুন l (খরচ জুলাই 2019 অনুযায়ী )

পরের পর্বে বাদামি, পট্টডাকাল, আইহোলে বিস্তর ঘোরাবো l আমাকেও এবার ট্রেন থেকে নামতে হবে.... বাদামি এলো বলে...

 

Meet the Blogger

Pratik Mukherjee


Name- Pratik Mukherjee
Profession- Technical professional in Heavy Automotive Industry
City- Kolkata
Hobbies- Photography,Travelling and Travel Blogging. Love watching movies and listening EDM.
Previous Tours-
West Bengal: Murshidabad, Malda, Shantiniketan, Digha,Mogholmari & Kurumbera Fort, Purbasthali, Digha,
National: Ghatshila, Vizag, Bangalore, Hampi, Bijapur, Badami, Pattadakal, Aihole,
International: Bhutan, Sri Lanka, Cambodia, Thailand, Myanmar.



You may also like