দ্বিতীয় পর্ব মন্দির নগরী - বাদামি, পট্টডাকাল, আইহোলে
Read The Deccan Trail- Part -1
ট্রেন তীব্র গতিতে ছুটছে বাদামির দিকে l এরই মধ্যে ঝম ঝম করে বৃষ্টি শুরু হয়ে গেছিলো ট্রেনে ওঠার পর l এখন বৃষ্টি কমে আবার পড়ন্ত বিকেলের সোনা রোদ জানলার কাঁচে ঠিকরে পড়ছে l তুলে দিলাম কাঁচ l ঠান্ডা ঝোড়ো হাওয়া মুখে এসে লাগলো l ট্রেন কৃষ্ণা নদী পেরোচ্ছে, মনে হলো আলমাট্টি ড্যাম দেখতে পেলাম l অনেকে বিজাপুর থেকে গাড়ি নিয়ে ঘুরতে চলে আসে এই ড্যাম দেখতে l তবে ছোট ড্যাম l আপনারা এটা বাদ দিতেও পারেন কারণ পশ্চিমবঙ্গে থাকার সুবাদে আমরা ছোট থেকেই অনেক ড্যামে গেছি l
বিজাপুর থেকে বাদামি বেশ কাছেই l মাত্র পাঁচটা স্টেশন l 2 ঘন্টা 20 মিনিটের দূরত্ব l ট্রেন বিজাপুরে 25 মিনিট লেট করে সন্ধ্যে 7.40 এ বাদামি পৌঁছে দিলো l এক নম্বরেই ট্রেন দিলো দেখলাম l স্টেশনে থেকে বেরিয়ে দেখলাম সার সার অটো দাঁড়িয়ে l বুক করেছিলাম KSTDC সরকারি হোটেল l ফ্ল্যাট রেট অটোভাড়া 100 টাকা l মিনিট 20 অটো চলার পর হোটেলে পৌঁছে গেলাম l ঠিক হোটেল বললে ভুল, বেশ একটা রিসোর্ট লুক দিয়েছে l গিয়ে চেক ইন করে লাগেজ নিয়ে রুমে চলে গেলাম l বেশ পরিপাটি বড়ো একটা রুম দিয়েছে দেখে মনটা ভালো হয়ে গেলো l বাথরুম পরিষ্কার, গিজারের সুবাদে গরম জলের ব্যবস্থা আছে l আমায় রুম দিয়েছিলো হোটেলের মেন বিল্ডিং এ l পেছনের দিকে তাদের সুইট এর কটেজ l কর্ণাটকের সরকারি হোটেল হিসেবে এর একটু বদনাম শুনেছিলাম কিন্তু ভুল ভেঙে গেলো আসার পর l যথেষ্ট ভালো এই হোটেল l রিসেপশনের পাশেই অনেকটা জায়গা জুড়ে রেস্তোরাঁ l তবে এই হোটেলের ব্যাপারে কটা কথা পরে আমি " কী পয়েন্টস " এ বলবো l
বাদামি না বাতাপি??
সেই পৌরাণিক যুগ থেকে বাদামির ইতিহাস শুরু l বাতাপি নামের এক রাক্ষসের বসবাস ছিল এই অঞ্চলে l তার নাম থেকেই বাদামি নামকরণ হয়। বাতাপি রাক্ষস যখন আছে তাহলে অগস্ত্য মুনি থাকারও কথা, তাই ভূতনাথ মন্দিরের সামনে যে জলাশয় আছে তার নাম অগস্ত্য লেক। এই অগস্ত্য মুনির পেটেই মৃত্যু হয় বাতাপি রাক্ষসের। মূলত বাদামি সবথেকে বেশি সমৃদ্ধ হয় চালুক্যদের শাসনকালে। প্রথম পুলকেশী ছিলেন চালুক্য বংশের প্রথম স্বাধীন শাসক। চালুক্য বংশের পতনের পর বাদামি শাসন করে পল্লব, রাষ্ট্রকূট, কল্যাণ চালুক্য,কলচুরি এবং বিজয়নগরের রাজা প্রথম হরিহর l খিলজি এবং তুঘলকের সুলতানের শাসনকালে আক্রমণও হয়েছিল বাদামিতে l বিজয়নগরের রাজার সাথে বিজাপুরের বাহমনির শাহ বংশের অনেকবার যুদ্ধ হয় l শেষে বাহমনিরা কৃষ্ণা নদীর উত্তর অব্দি সীমানা রাখে আর কৃষ্ণা নদীর দক্ষিণ অব্দি বিজয়নগরের সীমানা থাকে l এর পরে বাদামি মুঘল, মারাঠা, টিপু সুলতানের হাতে আসে l সবশেষে ব্রিটিশ সরকারের হাতে এলে তারা বাদামিকে বোম্বে প্রেসিডেন্সির অন্তর্ভুক্ত করে l
সাইটসিইং :
সকাল সাড়ে সাতটায় অটো চলে এলো l বলেই রেখেছিলাম পুরো বাদামি, মহাকুট, বনসংকরী, পট্টডাকাল, আইহোলে ঘোরাতে হবে l বলতে গেলে সারাদিনের প্ল্যান l বেরিয়ে প্রথমে ব্রেকফাস্ট করে নিলাম ইডলি দিয়ে l 24 টাকায় দুটো ইডলি, সাম্বার, চাটনি দিয়ে এক প্লেট ইডলি l আর সাথে 20 টাকার সাউথ ইন্ডিয়ান ফিল্টার কফি, যেটা আমার অত্যন্ত প্রিয় l হোটেলে ব্রেকফাস্ট নিইনি কারণ পেতেও সময় লাগবে আর অতিরিক্ত 150-200 টাকা হোটেল ভাড়ার সাথে যুক্ত হবে l বাদামিতে অনেক খাবারের দোকান আছে l মনে রাখবেন বাদামি, পট্টডাকাল, আইহোলের সব সাইট খোলে সকাল 8 টার সময় l তাই তাড়াহুড়ো করে সাত সকালে বেরিয়ে লাভ নেই l
বাদামির দ্রষ্টব্য স্থান :
1. ভূতনাথ মন্দির ( মূল দ্রষ্টব্য মন্দির )
2. মল্লিকার্জুন মন্দির
3. আর্কিওলজিক্যাল মিউজিয়াম
4. উচ্চ শিবালয় মন্দির
5. নিম্ন শিবালয় মন্দির
6.বাদামি ফোর্ট
7.মালগাট্টি শিব মন্দির
8. দত্তাত্রেয় মন্দির
9. ইয়াল্লাম্মা মন্দির
10. বাদামি গুহা মন্দির (1-2-3-4)
11. বিষ্ণু মন্দির (ভূতনাথের পেছনে )
12. কোস্তারায়া গুহা মন্দির ( বিষ্ণু মন্দিরের পাশে )
13. আক্কি -টাঙ্গি জলপ্রপাত ( যদিও জল প্রায় থাকেই না, সৌভাগ্যবশত পেতে পারেন ঘোর বর্ষায় )
14. জামা মসজিদ ( বাদামি গুহার সামনেই )
এগুলো সবই একই এরিয়ার মধ্যে, বেশ কাছাকাছি l প্রসঙ্গত বলে রাখি, বাদামি ফোর্ট, উচ্চ শিবালয়, নিম্ন শিবালয় পায়ে হেঁটে উপরে উঠতে হয় l ভালো করে পুরো দেখতে ঘন্টা দুয়েক তো লাগবেই l সাথে বাঁদরের ভীষণ উৎপাত, নিজেকে আর ক্যামেরা সাবধানে রাখবেন l বাদামি গুহার দিকে এতো বাঁদর নেই l ভালো করে বাদামি গুহা দেখতে এক থেকে দেড় ঘন্টা লাগার কথা l সবই যদিও নির্ভর করছে আপনার হাঁটার গতির উপর l বাদামি গুহার মূর্তিগুলো তৎকালীন ভাস্কর্যের অসামান্য নির্দর্শন l নটরাজের আঠেরো হাত বিশিষ্ট নৃত্যরত মূর্তি আমার আগে দেখার সৌভাগ্য হয়নি l এছাড়া হরিহর, বিষ্ণুর ত্রিবিক্রম অবতার, বরাহ অবতার, অনন্ত সাপের উপর অধিষ্ট বিষ্ণু, মহাবীর, পরেশনাথ, প্রথম জৈন তীর্থঙ্কর বাহুবলীর মূর্তি উল্লেখযোগ্য l বাদামির চারটে গুহার মধ্যে প্রথম গুহা শিবকে, দ্বিতীয় গুহা বিষ্ণুকে, তৃতীয় গুহা হরিহর অর্থাৎ শিব ও বিষ্ণু উভয়কেই আর চতুর্থ গুহা জৈন ধর্মকে উৎসর্গ করা হয়েছে l আমি ভারতবর্ষের অনেক জায়গায়তেই দেখেছি হিন্দু এবং জৈন ধর্মের শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান l তৃতীয় গুহাতে একটু ফ্রেস্কোও দেখতে পাবেন l
হাতে জলের বোতল রাখবেন, এখানে কিন্তু পথের মাঝে কোনো দোকান পাবেন না l ব্রেকফাস্ট হালকা করবেন কারণ বাদামি ফোর্ট বা গুহা দেখতে আপনাকে অনেক চড়াই উতরাই আর সিঁড়ি ভাঙতে হবে l চেষ্টা করবেন এই এতগুলো স্পট 12 টার মধ্যে শেষ করা l তাহলে বনসংকরীর দিকে রওনা দিতে পারবেন l বনসংকরী দেখে চলে যাবেন মহাকুট দেখতে l
পট্টডাকাল
মহাকুট দেখে পট্টডাকালের উদ্দেশ্য আমার অটো ছুটছে l প্রায় ঘন্টাখানেক যাওয়ার পর পট্টডাকাল আসার একটু আগেই মাঝপথে এক সুন্দর জৈন মন্দির দেখে চলে গেলাম পট্টডাকালের মন্দির কমপ্লেক্স এ l পট্টডাকালের সব মন্দির পাশাপাশি এই একটা কমপ্লেক্সের ভেতরে l এই কমপ্লেক্সের ভেতর মূলত 9টা হিন্দু মন্দির ও একটা জৈন মন্দির আছে l
লিস্ট করে দিচ্ছি আপনাদের :
1. কাদসিদ্ধেশ্বর
2. জাম্বুলিঙ্গেশ্বর
3. গলগনাথ
4. চন্দ্রশেখর
5. সঙ্গমেশ্বর
6. কাশী বিশ্বনাথ
7. মল্লিকার্জুন
8. বিরূপাক্ষ
9. পাপনাথ এবং জৈন নারায়ণ মন্দির
সব মন্দিরগুলো ঘুরতে এক ঘন্টার মতো সময় লাগে l এর মধ্যে একমাত্র বিরূপাক্ষ মন্দিরে পুজো হয় l বাকিগুলো হেরিটেজ সাইট l প্রসঙ্গত বলে রাখা ভালো পট্টডাকালের এই সব মন্দির ইউনেস্কো ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইটের অন্তর্গত এবং বাদামির গুহা মন্দির, আইহোলের দূর্গা মন্দির এই পট্টডাকাল সাইটের এক্সটেনশন হিসেবে ইউনেস্কোতে লিস্টেড l আর এগুলো সবই চালুক্য সাম্রাজ্যের অবদান l
পট্টডাকাল ঘুরে যখন আমি আইহোলের দিকে এগোচ্ছি অটোওয়ালা মঞ্জুনাথ এক নদী দেখিয়ে বললো এর নাম মালপ্রভা l কৃষ্ণার এই শাখা নদী একদম পট্টডাকালের মন্দির সাইটের পাশ দিয়ে বয়ে যাচ্ছে l হ্যাঁ, এই সেই মালপ্রভা নদী যেখানে পরশুরাম ক্ষত্রিয় নিধন সেরে নিজের কুঠার ধুচ্ছিলেন আর নদীর জল সাথে সাথে রক্তে লাল হয়ে যায় l তাই দেখে ভয়ে এক নারী আর্তনাদ করে বলে উঠেছিলেন, "আইইও হোলে" (রক্ত ) ! ব্যাস সেই থেকে আইহোলে.... (কথিত )
আইহোলে
প্রায় কুড়ি পঁচিশ মিনিট যাওয়ার পর এসে যাই আইহোলে l প্রথমেই আইহোলের একটু বাইরে দেখে নিলাম এক প্রাচীন জৈন মন্দির l তারপর আইহোলের মূল দ্রষ্টব্য স্থানের দিকে এগোলাম l সব সাইট দেখলাম বেশ কাছাকাছি l এখানে যদি এক রাত থেকে যান তাহলে নিজেরাই পায়ে হেঁটে সারাদিন ধরে ঘুরতে পারেন l সত্যি বলতে আমার আরো একবার আইহোলে আসার ইচ্ছে আছে, এবং পায়ে হেঁটে পুরো স্বণেষন করবো l আইহোলেকে বলা হয় মন্দির ভাস্কর্যের সবচেয়ে প্রাচীন বিদ্যালয় l সব মিলিয়ে এই ছোট্ট জায়গায় প্রায় 125 টা মন্দির আছে l সব তো একসাথে ঘোরা সম্ভব না, তাই উল্লেখযোগ্য মন্দিরগুলো ঘুরে নিন লিস্ট অনুযায়ী :
1.দুর্গা মন্দির কমপ্লেক্স ( বিখ্যাত, সুখ্যাত, প্রখ্যাত এই সেই অর্ধ গোলক মন্দির যার আদলটাই শিবলিঙ্গের মতো ) সাথে আইহোলে মিউজিয়াম
2. রাবণ ফাড়ি গুহা মন্দির
3. জ্যোতির্লিঙ্গ মন্দির কমপ্লেক্স
4. মল্লিকার্জুন মন্দির কমপ্লেক্স
5.হুচ্চিমাল্লি মন্দির
6. হুচ্চাপা মন্দির কমপ্লেক্স
7.ত্রম্বকেশ্বর মন্দির কমপ্লেক্স
8. কুন্তী মন্দির কমপ্লেক্স 9. অম্বিগেরা মন্দির কমপ্লেক্স 10.রামালিঙ্গা মন্দির কমপ্লেক্স 11.ভেনিয়ার মন্দির
12.গলগনাথ মন্দির কমপ্লেক্স
13. মেগুটি পাহাড়ে বুদ্ধ মন্দির সাথে আইহোলে ফোর্ট
14.বীর ভদ্রেশ্বর মন্দির
তবে এক্সপ্লোর করতে চাইলে করতে পারেন সব মন্দির l এক একটা কমপ্লেক্সে অনেক গুলো করে মন্দির আছে l দুর্গা মন্দির প্রাঙ্গনে সব মিলিয়ে বারোখানা মন্দির আছে যার মধ্যে সাতখানা উল্লেখযোগ্য মন্দির l এই কমপ্লেক্সটা সময় নিয়ে ভালো করে ঘুরুন, সকাল ছটা থেকে সন্ধ্যে ছটা অব্দি খোলা থাকে l এর ভেতরের মিউজিয়াম খোলা থাকে সকাল নটা থেকে সন্ধ্যে ছটা অব্দি l প্রধান মন্দির হলো দুর্গা মন্দির যা দেখে হলফ করে বলতে পারি আপনারা অভিভূত হবেন l আমার রাবণ ফাঁড়ি গুহা মন্দিরও দারুণ ভালো লেগেছিলো l জ্যোতির্লিঙ্গ মন্দির কমপ্লেক্স তো একদম ফটোগ্রাফির আদর্শ জায়গা l প্রিয়জনের কয়েকটা কভার পিক আপনার এখানেই হয়ে যাবে l মেগুটি পাহাড়র জৈন মন্দির সাথে আইহোলে ফোর্ট ও দারুণ লাগবে l
আমার সব ঘুরে শেষ করতে প্রায় পাঁচটা বেজে যায় l অটোওয়ালা কে অহেতুক তাড়া মেরে সোয়া ছটার মধ্যে আমি বাদামি ফিরে লাগেজ নিয়ে বেরিয়ে যাই স্টেশনের দিকে l জানি সেই গোল গুমবাজ এক্সপ্রেস লেট করে সাড়ে সাতটার আগে বাদামি পৌঁছবে না, তবু সাবধানে মার নেই l বেকার টেনশনের থেকে স্টেশনে গিয়ে বসে থাকা অনেক ভালো l এরই সাথে ঝিরঝিরে বৃষ্টি শুরু হলো আর সাথে যা কনকনে ঠান্ডা হাওয়া দিলো তাতে রীতিমত কাঁপিয়ে দেওয়ার জোগাড় ! বাদামি রঙের বাদামি ছেড়ে আমি এবার বেঙ্গালুরুর উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম l বিদায় বাদামি !
ট্রেন তার ঐতিহ্য বজায় রেখে সন্ধ্যে 7.45 নাগাদ এলো l
রসনা তৃপ্তি :
দক্ষিণ ভারতের খাবার শুনলেই আমরা সবাই মুখ ভেটকে ইডলি দোসা সাম্বারের কথা বলি l এটুকু বলবো ওখানে সারাদিন কেউ ইডলি দোসা খায় না l যেমন আমরা বাঙালিরা সারাক্ষন মাছ ভাত আর রসগোল্লা খাইনা l সব্জিও খাই, আলু পোস্তও খাই l তেমনি বাদামিতেও আপনি আমিষ খাবার পাবেন l হ্যাঁ মেনে নিচ্ছি ওদের তরকারিগুলো রান্নার পর বোঝা যায়না কি সব্জি ব্যবহার করেছে, কিন্তু স্বাদতো আলাদা?! ওটাই রিলিফ বলতে পারেন l আমিষ নিয়ে হাম্পি গ্রামের মতো গোঁড়া নয় এখানের রীতি l ব্রেকফাস্টে ব্রেড বাটার পাবেন, সাথে ইডলিরও অপসন আছে l আমি দুপুরে খেয়েছিলাম আইহোলের KSTDC হোটেল মৌর্য যাত্রী নিবাসের রেস্তোরাঁয় l এখানে কন্নড নিরামিষ থালি 130 টাকা পড়েছিল l ভাত, দুটো বজরার রুটি, মিষ্টি, সিমুইয়ের পায়েস, সাম্বার, রসম, তিন রকম তরকারি, চাটনি পাউডার গুঁড়ো দিয়ে পেট ভরা থালি l বিজাপুর থেকে থালির দাম বেশি কারণ এটায় একটু ব্রান্ডের ছোঁয়া আছে l আগেরদিন রাতে বাদামিতে আমি KSTDC হোটেলের বাইরে লোকাল হোটেলে ডিনার করেছিলাম l রুটি আর ডাল ফ্রাই l 100 টাকার মতো পড়েছিল l প্রসঙ্গত বলে রাখি, আমার মতো সাত ঘাটের মাংস খাওয়া ছেলে কিন্তু পুরো ট্রিপে নিরামিষ খেয়েছে l বেশ এনজয় করেছি কিন্তু ব্যাপারটা l
অল্টারনেট প্ল্যান
যারা আমার মতো হুড়োহুড়ি করে ঘুরতে অপছন্দ করেন তাদের বলবো আরো সময় নিয়ে বাদামি ঘুরুন l দুপুরে হোটেলে ফিরে ফ্রেশ হয়ে লাঞ্চ করুন তারপর চেক আউট করে মহাকুট, বনসংকরী দেখে সোজা আইহোলে চলে যান l ওখানে KSTDC হোটেল মৌর্য যাত্রী নিবাসে গিয়ে উঠুন l রাত্রিবাস করে পরের দিন সকালে আইহোলে আর পট্টডাকাল ঘুরে চেক আউট করে বাগালকোট স্টেশন থেকে বেঙ্গালুরুর ট্রেন ধরুন l অথবা বিজাপুর থেকে বাগালকোট নেমে আইহোলেতে রাত্রিবাস করে পরের দিন ভালো করে আইহোলে, পট্টডাকাল ঘুরে বাদামিতে চলে গিয়ে রাত্রিবাস করুন l তারপর দিন ভালো করে বাদামি, মহাকুট আর বনসংকরী দেখে বিকেলে চেক আউট করে বাদামি স্টেশন থেকে বেঙ্গালুরুর ট্রেন ধরুন l যেটা আপনার ইচ্ছে l তবে ঘুরে এসে ফ্রেশ হওয়া নিয়ে খুঁতখুঁত না থাকলে বলবো সকালে উঠেই চেক আউট করে লাগেজ রিসেপশনে রেখে ঘুরে চলে আসুন l তারপর ফিরে এসে লাগেজ নিয়ে স্টেশন চলে যান l চেক আউট সকালে করলে আপনার সেদিনের ভাড়া লাগবে না, সারাদিন ঘুরে ফিরতে ফিরতে আপনার বাদামি বা আইহোলেতে বিকেল 4টে হবেই, তাই এটা সাশ্রয়কারী সাজেসশন l আমি যেমন সকালেই সেদিন চেক আউট করে লাগেজ হোটেলের রিসেপশনের জিম্মায় রেখে নিশ্চিন্তে ঘুরতে চলে গেছিলাম l সরকারি ব্যাংকে টাকা রাখা আর সরকারি হোটেলে লাগেজ রাখা প্রায় একই ফীল দেয় !
কী পয়েন্টস :
1. বাদামির হোটেল "KSTDC হোটেল মৌর্য চালুক্য বাদামি" বিষয়ে আগে বলবো l শুনে ঘাবড়াবেন না l হোটেল কিন্তু খুব ভালো l দারুণ রুম l শুধু চেষ্টা করবেন মেন বিল্ডিংয়ের রুম গুলো নেওয়ার l মানে যে রুমগুলো রেস্তোরাঁর ভেতর দিয়ে লোহার সিঁড়ি দিয়ে উঠে গেলে দেখা যায় l যেমন 307, 308 প্রভৃতি l আমার ছিলো 307 l এগুলো সব ডাবল বেড সেমি ডিলাক্স এ সি রুম l এ সি ও যথেষ্ট ভালো কাজ করেছে আর রুম খুব বড়ো, পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন l স্যুইট নেবেন না কারণ সেখানে ভীষণ বাঁদরের উপদ্রব l আসলে প্রচুর গাছপালা, বাগান আছে হোটেলের ভেতর l দ্বিতীয় অভিজ্ঞতাটা একটু অন্যরকম l এদের মনে হয় রাতের বেলা বাথরুমে জল শেষ হয়ে গেলে পাম্প চালাবার কেউ থাকেনা l ভোর ছটায় উঠে দেখি কলে জল নেই l নিচে গিয়ে দেখি রিসেপশনে কোনো লোক নেই l সাতটার আগে কেউ আসেনা l নেহাত আমার বালতি ভরে রাখার বদভ্যাস আছে তাই বেঁচে গেছিলাম l বাথরুমে ড্রামের সাইজে পেল্লায় বালতি আমি আগেরদিন রাতেই ভরে রেখেছিলাম তাই আমার প্রাতঃকর্ম, স্নানে কোনো অসুবিধা হয়নি l জানিনা কারোর যদি পেটে গোলমাল হয়ে মাঝরাতে প্রকৃতির ডাক পড়ে তাহলে কি করবে ! এরকম ঘটনার সম্মুখীন আগে কখনো হইনি বলে এখানে উল্লেখ করলাম l
2. দেখুন আমার প্ল্যান যেহেতু বেঙ্গালুরু থেকে বেঙ্গালুরু পর্যন্ত ছিলো তাই এভাবে করেছি l হতেই পারে আপনারা শুধু এগুলো দেখতে আসতে পারেন l সেক্ষেত্রে প্লেনে ব্যাঙ্গালুরু হয়ে হুবলি বিমানবন্দরে এসে গাড়ি / বাস / ট্রেন করে বাদামি আসতে পারেন l কলকাতা থেকে অমরাবতী এক্সপ্রেস (18047) ধরে হসপেট (HPT)নেমে হাম্পি, বাদামি, আইহোলে, পট্টডাকাল, বিজাপুর ঘুরে নিতে পারেন l অথবা গাদাগ (GDG ) নেমে বাদামি আসতে পারেন বাসে, ঘন্টা দুয়েক লাগবে (83km) l প্রসঙ্গত বলে রাখা ভালো, যে গাদাগেও 5 টা ভালো মন্দির, বার্ড স্যাংচুয়ারি, আর ফোর্ট আছে দেখবার মতো l ভেবে দেখতে পারেন l
3. ডাউন গোল গুমবাজ এক্সপ্রেস ( 16536 ) বিজাপুর (BJP ) থেকে বিকেল 4.55 ছেড়ে বাদামিতে (BDM) আসার সময় সন্ধ্যে 7.15 কিন্তু আসবে ওই 7.40-45 এ, ওদিকে রাতে তেড়ে মেক আপ করে আপনাকে বেঙ্গালুরু (ইপির /SBC) পৌঁছে দেবে সিডিউল সময়ে সকাল 8 টায় আর একদম থামে গিয়ে সকাল 11টায় মাইসোরে l এই ট্রেনে কিন্তু পান্ট্রি নেই, তাই রাতের খাবার ব্যবস্থা করে নিয়ে উঠবেন l আমি বাদামির দুটো স্টেশন পর গাদাগ স্টেশনে নেমে কুড়ি টাকায় চারটে গরম ইডলি পেয়ে গেছিলাম l সেটাই আমার ডিনার ছিলো l বাদামি থেকে বেঙ্গালুরু স্লিপারের ভাড়া 330 টাকা l থ্রি এ সি হলো 905 টাকা l বিজাপুর থেকে বাদামি ডাউন গোল গুমবাজ এক্সপ্রেসে স্লিপারে ভাড়া লাগে 140 টাকা l
4. বাদামির সব সাইট খোলে সকাল 8টার সময়, গুহা মন্দির, মিউজিয়াম সকাল 9 টায়, সব বন্ধ হয় বিকেল 5.30 টায় তাই খুব সকালে বেরোবার দরকার নেই l পট্টডাকালে সকাল 8 টা - সন্ধ্যে 6টা l আইহোলেতে সকাল 6 টা থেকে সন্ধ্যে 6 টা l ঘোরার ভালো সময় হলো শীতকালে কিন্তু অক্টোবর থেকে মার্চ অব্দি অনায়াসে যাওয়া যায় l তবে বর্ষার এক আলাদা রূপ আছে l
5. পার হেড এন্ট্রি ফী আপনাকে দিতে হবে বাদামি মিউজিয়ামের জন্য 15 টাকা, মোবাইল ব্যতীত যেকোনো ক্যামেরার জন্য অতিরিক্ত 25 টাকা l বাদামি গুহা মন্দির ও পট্টডাকালের মন্দির কমপ্লেক্সে ঢুকতে লাগে 25 টাকা l DSLR ক্যামেরার জন্য টাকা লাগেনা l ভিডিও ক্যামেরায় 25 টাকা লাগবে l আইহোলেতে শুধু দুর্গা মন্দির কমপ্লেক্সে ঢুকতে লাগে 25 টাকা আর যেকোনো ক্যামেরা থাকলে আরো 25 টাকা l দুর্গা মন্দিরের ভেতর মিউজিয়ামে ঢুকতে অতিরিক্ত 10 টাকা লাগে l আর কোথাও ঢুকতে টাকা লাগে না l তবে টিকিট ফেলবেন না l অনেকসময় অন্য মন্দিরে দেখতে চায় l
6. বাদামি, পট্টডাকাল আর আইহোলে ঘুরতে আপনার খরচা হবে আন্দাজ 3000 প্রতি জন ( বিজাপুর থেকে বাদামি, বাদামি থেকে বেঙ্গালুরু ফেরার নন-এ সি ট্রেন ভাড়া , অটোয় সাইটসিইং, নিরামিষ ব্রেকফাস্ট +লাঞ্চ + ডিনার + পানীয় জল ) l যদি দুজন হন হোটেল আর অটোভাড়া একটাই ধরুন l শুধু খাওয়া, ট্রেন ভাড়া দুগুণ করে নেবেন l (খরচ জুলাই 2019 অনুযায়ী )
আমার ঝটিকা সফর আপাতত এখানই শেষ l গতবছর হাম্পির পর এবছরের এই সফরে আরো বেশ কয়েকটা গুরুত্বপূর্ণ স্থান ঘুরিয়ে দিলাম আপনাদের l
Name- Pratik Mukherjee
Profession- Technical professional in Heavy Automotive Industry
City- Kolkata
Hobbies- Photography,Travelling and Travel Blogging. Love watching movies and listening EDM.
Previous Tours-
West Bengal: Murshidabad, Malda, Shantiniketan, Digha,Mogholmari & Kurumbera Fort, Purbasthali, Digha,
National: Ghatshila, Vizag, Bangalore, Hampi, Bijapur, Badami, Pattadakal, Aihole,
International: Bhutan, Sri Lanka, Cambodia, Thailand, Myanmar.