Tripsee Treks  and Tours LLP
Blog and Travel with Us

সফর (রাচী নেতারহাট বেতলা)



Soumen Chakraborty Soumen Chakraborty

বলছি কি ?আপনাদের সবাইকে বলছি এই বর্তমান পরিস্থিতিতে বাইরে যাওয়ার উপায় নেই আর পকেটে টাকার জোর নেই তাই ভাবলাম একটু মানস ভ্রমণ করা যাক। তো সেদিন ভ্রমণের কথা চিন্তা করতে করতেই পুরোনো ডায়েরি ঘাঁটা শুরু করলাম , সেখানে অনেক পুরনো ভ্রমণ কাহিনী লেখা আছে দেখলাম তাই ভাবলাম ভ্রমণ কাহিনী আপনাদেরও শোনাই আশা করি আপনারা সবাই শুনবেন এবং উৎসাহিত করবেন।

"জিন্দেগি কা সফর হে ইয়ে ক্যাইসা সফর।।

 কোই  সামঝা নেহি কোই জানা নেহি" 

সত্যিই জীবনের সফর এত ব্যাপক ছড়ানো যে তার নাগাল পাওয়া সাধারণ লোকের ধরা ছোয়ার বাইরে, তবে আমার এই সফর, জীবনের সেই সব ভ্রমনমূলক যাত্রা অভিজ্ঞতা যা মানুষ ইচ্ছা করলে সহজেই ছুঁয়ে আসতে পারবে ।

সেদিন ডিসেম্বরের 25 তারিখ  অর্থাৎ বড়দিনের দিন আমরা আমাদের নিজেদের ক্লাব বালি পালপাড়া ক্লাব থেকে রাত ন'টা নাগাদ বাস ছাড়লাম রাঁচির উদ্দেশ্যে আমাদের পরিবারের সকলের ও পাড়ার চেনাশোনা সকলেই এই যাত্রার যাত্রী হলাম ।সালটা ছিল 1995 ।তখন ভ্রমণ মানেই  বাসে করে ভ্রমণের খুব চল ছিল। বাস হাইরোড ধরে বেশ দ্রুত বেগে দৌড়াতে শুরু করলো যাতে সকাল-সকাল রাচী পৌঁছে হোটেল বুক করতে পারি ।এর মধ্যেই বাসের লাউড স্পিকারে হিন্দি জনপ্রিয় গান ভেসে আসছে আর তার সাথে সাথে সমবয়সীদের নাচ ইয়ার্কি ঠাট্টা শুরু হয়েছে কিন্তু আমাদের দুর্ভাগ্য বুঝি শুরু হলো বিহারে ঢোকার পর থেকে । দেখা গেল বাসটা নানা যান্ত্রিক ত্রুটি নিয়েই বেরিয়েছে যদিও বাসটি সুপার ডিলাক্স ছিল কিন্তু বাইরে থেকে সেটি যত চাকচিক্য দেখাক ভেতরে নানা রকম সমস্যা নিয়েই বাসটা যাত্রা শুরু করেছিল ,অগত্যা মধুসূদন ভরসা। নানা কষ্ট ও তার সাথে লালমাটির গরম সহ্য করতে করতে বাসের প্রায় সকলেই খিদের জ্বালায় ধুঁকতে ধুঁকতে প্রায়  বেলা দেড়টা নাগাদ রাচি পৌছালাম ।এরপর রাচি শহরের মধ্যে লেকের ধারে আমরা একটা আশ্রম মতন হোটেল ভাড়া করে ঢুকে পড়লাম। আমাদের সঙ্গে ক্যাটারিং এর লোকজন গিয়েছিল। তো সেই ক্যাটারিং এর সুভাষদা রান্না চাপালো আর আমরা, অর্থাৎ আমি পাশের বাড়ির সোনাদা এবং আরো তিন চারটে ছেলে বেরোলাম চান করতে। মেইন রোডের ধারে একটা বড় পুকুরে চান সারলাম এবং ফিরে এলাম হোটেলে। এখানকার লোকেদের কথাবার্তা বুঝতে আমাদের কোন বেগ পেতে হলো না কারণ আমরা সকলেই প্রায় হিন্দি বলতে ও বুঝতে সক্ষম।

পরের দিন শুরু হল যাত্রা নেতারহাট এর উদ্দেশ্যে। বেলা আটটা থেকে নটা নাগাদ আমরা যাত্রা শুরু করলাম। এ প্রসঙ্গে একটা কথা জানিয়ে রাখা প্রয়োজন যে এটা হল সমতলের শেষ সীমানা । এরপর থেকে সমস্ত রাস্তায় পাহাড়ে ওঠার রাস্তা। সেই অনুযায়ী আমরা যে যার সিটে আরামে বসে রোমাঞ্চ নিয়ে শুরু করলাম অভিযান। এরপর বাস রাচি ছেড়ে যত এগোচ্ছে পাহাড় ও পাহাড়িয়া রাস্তা ততই নজরে আসছে। আমাদের সকলের ভাগ্য বলতে পারো বা দুর্ভাগ্য বলতে পারো যে গাড়ির ডাইভার নেতারহাটে যাওয়ার সবচেয়ে দুর্গম পথটিই বেছে নিয়েছিল কারণ পিচ করা ভালো রাস্তাটার হদিস তার জানা ছিল না। বাস চলছে ছোট পাহাড়ের রাস্তা ধরে। পাহাড় কেটে রাস্তা তৈরি হয়েছে বলে সেগুলি খাড়াই এবং অপ্রশস্ত, ঘুরে ঘুরে উপরে উঠতে হচ্ছে। তখন বাসের সকলেই চুপচাপ, ততক্ষন আমাদের চোখের সামনে প্রকট হয়ে ধরা দিচ্ছে  চারিদিকে দিগন্ত বিস্তৃত সবুজ পাহাড়। মাঝখান দিয়ে সরু একফালি নদী মাঝেমাঝেই মিলিয়ে যাচ্ছে।

যে রাস্তা ধরে আমরা পাহাড়ে উঠছি তা মাঝে মাঝে এতটাই খারাপ যে ড্রাইভার সকলকে নেমে যেতে বলে গাড়ি উপরে উঠিয়ে ছিল। রাস্তার একধারে খাড়া পাহাড় আর ডানদিকে ফেলে আসা রাস্তা এত ছোট এসেছে আমাদের চোখের সামনে যে তাকাতেই অনেক বয়স্করা ভয় পাচ্ছিল। লরি গুলোকে  লাগছিল মারুতি গাড়ির মতো। চারিদিকে নিস্তব্ধ বড় বড় গাছ থেকে পাতা ঝরার শব্দ শোনা যাচ্ছে আর মাঝে মাঝে এতো অপরূপ পাহাড়িয়া দৃশ্য শোভা পাচ্ছে যে মনে হচ্ছে সেখানেই নেমে কাটিয়ে দি সারাটা বেলা । দূরে কোন কোন ন্যাড়া পাহাড় থেকে বর্ষার প্রবলবেগে যে জলধারা গড়িয়ে পড়তো তার দাগ এখনও দেখা যাচ্ছে। এদিকে সূর্য একটু একটু করে পাহাড়ের ভেতর ঢুকে পড়ছে। বেলা চারটে বা তার কিছু সময় পরে আমরা পৌঁছালাম নেতারহাট ।এত দীর্ঘ যাত্রায় সকলের পেটে টান তাই একটা কম দামি হোটেলে তাড়াতাড়ি করে উঠলাম এবং রান্নার ব্যবস্থা করা হলো।

হোটেলটা খুবই সাধারণ মাপের। সামনে খোলা মাঠ, তারপরে পিচ রাস্তা এবং তার ওপাশের শাল সেগুন গাছের জঙ্গল। সেদিন ক্লান্ত হয়ে ছিলাম,তাই খাওয়া-দাওয়া সেরে পাহাড়ে না বেরিয়ে বিকালবেলা সবাই মিলে গেলাম পাহাড়িয়া মানুষদের হাটে। সেদিন সেখানে হাট বসে ছিল। হাটে সেই আদিবাসী পোশাকে নানা আদিবাসী লোকেদের নজরে পড়লো এবং নানারকম প্রাত্যহিক জীবন যাপনের জিনিস বিক্রি হচ্ছে দেখলাম। তবে বেশি নজরে পড়লো মহুয়া ফুল বিক্রি হচ্ছে আর সাঁওতাল যুবক-যুবতীরা সেখানে নিজেদের মধ্যে হাসি মশকরা করে সময় কাটাচ্ছে। সেখানে কিছুক্ষণ ঘোরাঘুরি করে ফিরে আসলাম আমাদের নিজেদের আস্তানায়।

পরদিন ভোরবেলা সূর্যোদয় দেখার ভিড়ে মিশে গেলাম। সেখানে একটা হোটেল ছিল যার নাম মনে নেই। সে হোটেল সংলগ্ন সিমেন্ট দিয়ে বাঁধানো চত্বর এবং সেখান থেকেই নেতারহাট সূর্যোদয় এবং সূর্যাস্ত দেখার ব্যবস্থা ছিল, খুব সম্ভবত কোনো সরকারি গেস্ট হাউস হবে। ঘন ঘন ফ্লাশ লাইটের ঝলকানি হচ্ছে তখন আমার চারপাশে । আমাদের টুরিস্ট দল বিভক্ত হয়ে গেল যে যার মতন ।তবে বেশিক্ষণ সে দৃশ্য দেখার সৌভাগ্য হলো না ফিরতে হল বাসে, কারণ বাস আবার রওনা দেবে রাঁচির উদ্দেশ্যে, এবং তাকে ছুঁয়ে বিহারের পাটনা টু বেতলা ইত্যাদি জায়গায় ঘুরতে যাওয়ার ব্যবস্থা।  আমরা রাচি ফিরে উঠলাম অন্য একটি বড় মাড়োয়ারি আশ্রমে।

ধীরে ধীরে সন্ধ্যে হয়ে এলে দলের ছেলেরা সামান্য এদিক ওদিক ঘুরতে চলে গেল। কেউ দোকান থেকে কিছু কেনাকাটার উদ্দেশ্যে বের হলো। কিন্তু অন্যদের মুখে শুনলাম রাঁচির মধ্যিখানে যে বড় একটা পাহাড় আছে তার মাথায় একটা শিবমন্দির রয়েছে এবং সেখান থেকে সমস্ত রাচি শহরটাকে দেখা যায়। সুতরাং আমরা 6-7 জন মিলে বেরিয়ে পড়লাম রাত্রিবেলা সেই পাহাড়ের মাথা থেকে রাতের শহরটাকে দর্শন করব বলে। 

মন্দিরটা কম করে হাজার ফুট বা তার থেকে আরো কিছু বেশি উঁচুতে অবস্থিত।ওঠার দুটো রাস্তা, একটা সিঁড়ি দিয়ে আর অন্যটা খাড়াই ।রাতে প্রথম পথ বেছে নেয়া গেল স্বাভাবিকভাবে। মন্দিরে প্রায় 300 কি 400 সিঁড়ি ভেঙ্গে হাঁপাতে হাঁপাতে উঠলাম পাহাড়ের চুড়ায়।

দেখলাম মন্দির থেকে রাতের রাচি শহরের সবটাই দেখা যাচ্ছে। কি অপূর্ব দৃশ্য, যেন মনে হচ্ছে সারা শহরটাকে দীপাবলীর সাজে সাজিয়ে দেয়া হয়েছে। বেশ ভালো লাগছিলো শহরটাকে শুধু আলো আর আলো আর আমরা যেখান থেকে এই দৃশ্য দর্শন করছি সেই পাহাড়ের মাথা সম্পূর্ণ অন্ধকার শুধু মন্দির টুকু বাদ দিয়ে। উপরে ঠান্ডা টাও বেশ জমাট এবং চারিদিকে ঠাণ্ডা হিমেল হাওয়া ছুটে এসে হাড় পর্যন্ত কাঁপিয়ে দিয়ে যাচ্ছে।  মন্দিরের ভেতর কয়েকজন লাল বসন পরিহিত সাধু বসে আগুনের ওম নিচ্ছে আমরাও আগুনের চারপাশে বসে পরলাম প্রায় এক ঘন্টার মতন বসে পুনরায় ফিরে এলাম হোটেলের ঘরে। পরের দিন আমাদের গন্তব্য স্থল হলো ছিন্নমস্তার মন্দির (রাজারাপ্পা) ও দশম ফলস।

ছিন্নমস্তা যাওয়ার দিনটি ছিল নতুন বছরের শুরুর দিন। অর্থাৎ নতুন বছরে আমরা রাস্তায় কাটালাম।  সকাল সকাল বেরিয়ে ছিলাম, কিন্তু আগেই বলেছি দুর্ভাগ্য আমাদের তাড়া করছিল তাই মাঝ রাস্তায় গাড়ি খারাপ সুতরাং সেখানে পৌছতে বেশ বেলা হল। সেখানে পূজো সেরে দশম এর উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করলাম। বাসের যান্ত্রিক ত্রুটি থাকায় এবং তার সাথে রাস্তা বাজে হওয়ার হওয়ায় দশমে পৌঁছতে দেরি হয়ে গেল ফলে দেখার সময় কেটেছেঁটে আধঘন্টা করা হলো জানিনা আধঘন্টা দেখা জলপ্রপাতের বর্ণনা কিভাবে দেব? চোখের সামনে বৃত্তাকার খাদের এক প্রান্ত থেকে বিপুল জলরাশি গর্জন করতে করতে নিচের পাথরে ধাক্কা খাচ্ছে সেই ঘা খাওয়া জল ঘুরতে ঘুরতে আরো নিচে নেমে গিয়ে একটা শান্ত জলাশয় প্রবাহিত হচ্ছে।। জায়গাটা টুরিস্টদের ভীড়ে গিজগিজ করছে। নিচে পাথরের গা বেয়ে তির তির  করে যে জল পড়ছে সেখানে কয়েকজন উৎসাহী যুবকদের ভিড় দেখলাম। তারা চান করছে লাফাচ্ছে ।বয়স আমারও কম সুতরাং আমিও কম না, আর তার ফলস্বরূপ একটা টিটেনাস ইনজেকশন নিতে হয়েছিল ডাক্তারের কাছ থেকে। আবার বাস ফিরে যাওয়ার পথ ধরল।

ও আর একটা মজার ঘটনা সেই যাত্রাপথে ঘটল। যেটা না বললে আমি মনে করি ভ্রমণের সঠিক আনন্দটা বোঝানো যাবে না ।সেইসময়ের বিহারের জাতপাতের লড়াই যে কি পরিণতিতে পৌঁছেছিল তার একটা স্পষ্ট ধারণা তৈরি করবে সকলের মনে। বাসটা পাটনা ও রাচীর মধ্যে কোন একটা গ্রামের পাশের রাস্তায় খারাপ হয়ে যেতে বাসের সকলেই নেমে পড়ে । রাস্তাটা বেশ মসৃণ ও প্রশস্ত ।রাস্তার দুধারে বড় বড় বনসৃজন এর গাছ দেখলাম । দুপাশে পাথুরে জমি এবং তারও দূরে পাহাড়। আমি এবং আমাদের দলের বেশ কয়েকজন যুবক এবং কয়েকজন দাদা ও আরো কিছু ছেলে মাঠের ধারে বেড়াতে লাগলাম। আমাদের মধ্যে একজন (সোনাদা) দেখলো যে কয়েকজন বিহারী ছেলেমেয়ে শুধু দু প্রান্তরের মাঠে একটা দা আর শাবল দিয়ে  মাটি খুঁড়ে মেঠো ইঁদুর ধরছিল । তারা নিচু সম্প্রদায়ের ছেলে মেয়ে ছিল, সম্ভবত এসব সম্প্রদায়ের লোকেরা যারা ইঁদুরগুলোকে  ধরছিল তারা পুড়িয়ে খায় বলে শুনেছিলাম এবং সেটা আমাদের জানাও ছিল। তো আমরা যখন তাদের কাছাকাছি যাচ্ছিলাম তখন দেখলাম যে তারা ছুটে পালাচ্ছে তাদের গ্রামের দিকে ।মাঠে যে দা-শাবল দিয়ে তারা মাটি খুঁড়ে ছিলো সেটা সেই অবস্থাতেই ফেলে পালাচ্ছে। আমরা তাদের সেই দা আর শাবল ফিরিয়ে  দেয়ার জন্য তাদের পিছু পিছু তাদের গ্রামের দিকে হাটতে থাকলাম আর চিৎকার করে তাদেরকে ডাকতে থাকলাম। তো আমাদের দলে বেশ কিছু সন্ডামার্কা ছেলে থাকায় দেখলাম গ্রামের লোকেদের ভেতর হুড়োহুড়ি পড়ে গেছে ।আমরা যত এগোচ্ছি গ্রামের দিকে, গ্রামের লোক ততো ভয় পেয়ে পালাচ্ছে পাহাড়ের দিকে। প্রথম দিকে সকলেই একটু অবাক হয়েছিলাম! ব্যাপারটা কেউ ঠাওর করতে না পাওয়ায় অনেক কষ্টে একটা বৃদ্ধ লোককে ধরে জিজ্ঞাসা করবো বলে দাঁড় করাতেই সেই বৃদ্ধ লোকটি চোখেমুখে আতঙ্ক এবং ভয়ে কাঁটা। তার কাছে হিন্দিতে আমরা নিজেদের পরিচয় দিতেই সে কিছুটা ধাতস্থ হল এবং বলল যা তার মানে এটাই দাঁড়ালো যে কিছুদিন আগে কয়েকজন গ্রামবাসী উচ্চবর্ণের গুন্ডাদের হাতে খুন হয় ফলে এই হরিজন' গ্রামটিতে চাঁপা ভয় ও অশান্তি বিরাজ করছে। পুলিশ এলাকায় 144 ধারা জারি করে গুলি মারার অর্ডার দিয়ে মোকাবিলা করতে চাইছে আসন্ন সংকটের এই অবস্থায় দলবেঁধে আমাদের  আসতে দেখে তারা ভেবেছিল আবার নতুন আক্রমণের জন্য গুন্ডা আসছে তাদের গ্রামে, তাই তারা সকলেই প্রাণভয়ে পালাচ্ছিল পাহাড়ের আশ্রয়ে ।আমি শুনে অবাক যে এদের নিরাপত্তা বলে কিছু নেই এই ঘটনার পর আমরা তারাতারি ফিরে এলাম বাসে ততক্ষণে বাস ও যাত্রা করার জন্য প্রস্তুত হয়ে গেছে।

পরের দিন হোটেল ছেড়ে রওনা দিলাম বেতলা ফরেস্ট এর উদ্দেশ্যে,ভোরবেলা পাঁচটা নাগাদ।জেলার নাম পালামৌ ।রাঁচি থেকে প্রায় আড়াইশো কিলোমিটারের রাস্তা। এখানে অবস্থিত বিহারের একমাত্র বড় অভায়ারণ্য বেতলাফরেস্ট। বাস যত অভয়ারণ্যের কাছে এগোতে লাগল জঙ্গলের গভীরতাও বাড়তে লাগল। রাস্তার দু'ধারে সাল সেগুন শিশু ও নানা ধরনের গাছ মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে। গন্তব্যস্থলে এসে একটা হোটেল ঠিক করে ঢুকে পড়লাম। বিকেল হলে বাসে করে আমরা অভায়ারণ্য দেখতে বেরোলাম। দলের কেউ কেউ জীপ ভাড়া করেও জঙ্গল দেখতে গিয়েছিল, এর মধ্যে আমাদের একটা দল হাতির তাড়াও খেয়েছিল। কয়েকজন হাতির পিঠে করে জঙ্গল দর্শনে গেছিল, তাদের ভাষায় সে এক রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতা যদিও আমি ছিলাম না সে দলে।

এখানে আরেকটি মজার ঘটনাও ঘটে আমাদের দলের তিনটি ছেলে ভোরবেলায় গিয়েছিল বনের ধারে প্রাতঃভ্রমণ করবে বলে। জঙ্গলের গভীরে নয়, একদমই মেন রাস্তা থেকে বেশ কিছুটা ভেতরে। সেখানে তারা তিনজনেই কোন একটা জায়গায় বসে ছিল এমন সময় এক ঝোপের আড়ালে একটি হরিণ কে দেখে শরৎচন্দ্রের শ্রীনাথ বহুরূপী গল্পের মত হরিণ কে বাঘ মনে করে  তারা এমন ছুট লাগিয়েছিল যে তাদের একজন পড়ে গিয়ে শয্যাশায়ী হয়ে পড়ে, বহু কষ্টে তাকে শুশ্রূষা করে সারিয়ে তোলা হয়। বনের ধারে নানা কটেজ দেখলাম সেখানে হরিণরা অবলীলায় ছুটে বেড়াচ্ছে জায়গাটা অতি মনোরম তাতে বিন্দুমাত্র সন্দেহ নেই যাইহোক এবার আমাদের ঘরে ফেরার পালা। তারপরের দিন আবার রাচি বেতলা মেন রোড ধরে আমাদের বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা হলাম। ভালো ভাবেই আমরা সবাই ঘরে ফিরলাম আবার সেই চেনা পরিবেশ চেনা  সমাজে হারিয়ে গেলাম।

Meet the Blogger

Soumen Chakraborty


নাম: সৌমেন চক্রবর্তী।
পেশা: মেকানিক্যাল ক্যাড (CAD) ডিজাইনার।



You may also like