গতকাল ছিল বিশ্ব পর্যটন দিবস..লিখব লিখব করে আর লেখা হয় ওঠে নি..মাস ৪ আগে কেদারনাথ বদ্রীনাথ গিয়েছিলাম, দুটো জায়গারই যেমন কিছু বৈশিষ্ট আছে তেমনি মিল আছে, ভারী সুন্দর জায়গা। গাড়োয়ালের পর্যটন মানচিত্রে যেমন এই জায়গাগুলো কে তীর্থক্ষেত্র হিসাবে দেখা হয়, আবার যাঁরা ভ্রমন পিপাসু তাঁদের কাছে হিমালয়ের সান্নিধ্যে কটা দিন কাটাবার জন্য অতীব মনোরম জায়গা..আমাদের উদ্দ্যেশ্য অবশ্য দুটোই ছিল। রাস্তাঘাট যথেষ্ট ভাল তবে পাহাড়ী রাস্তায় যে ধ্বশ নামে তার প্রকোপ যেমন ছিল আবার প্রশাসনের দিক থেকে রাস্তা শীঘ্র মেরামতি করার ব্যাবস্থাও দেখেছি।রাস্তায় প্রচুর গাড়ী, ট্রাফিক জ্যাম, যার ফলে গাড়ীর মন্থর গতি, প্রচুর সময় লেগে যায় একজায়গা থেকে আরেক জায়গায় পৌঁছুতে। তাই আমার মনে হয় এই জায়গা গুলো অক্টোবার নভেম্বার মাসে যাওয়াই ভাল। এই বক্তব্য ওখানকার হোটেল বা স্থানীয় মানুষদেরও। এত মানুষ বেড়িয়ে পড়েছে, এত ভীড় এটা যেমন একদিক দিয়ে ভাল আবার যাঁরা চুপচাপ অপরূপ নৈসর্গিক প্রাকৃতিক দৃশ্য উপভোগ করতে চান বা একান্তে কটা দিন কাটাতে চান তাঁদের বিরক্তির কারন হয়ে ওঠে।কিছু কিছু জায়গা এমনই আছে, চারিদিকে সাদা বরফ ঢাকা হিমালয়শৃঙ্গের সৌন্দর্য আর তার সাথে পাইন দেওদার ছাওয়া নিরালা রাস্তা যা দেখে মনে হয় এক মায়াময় রাজ্য।আজ আমি কেদার বদ্রী নিয়ে লিখছিনা, আমি আজকে লেখার জন্য এমনই একটা জায়গা তুঙ্গনাথ কে বেছে নিয়েছি, যেখানে গিয়ে বা যাবার পথে মনে হয় স্বর্গের উদ্দ্যেশে বেড়িয়েছি। আগেই বলেছি কেদার বদ্রীর রুপ বা আকর্ষণ একরকম আর তুঙ্গনাথের আরেকরকম।
কেদার থেকে নেবে আসার পর গুপ্তকাশীতে রাত্রীবাস করে রওনা হলাম পঞ্চকেদার বা উখিমঠের পথে।এখানকার মন্দিরেই কেদারনাথের বিগ্রহের পূজো হয়। শীতকালে অর্থাৎ দীপাবলীর পরের দিন কেদারবাবা নেবে আসেন উখিমঠে, পুরো শীত কাটিয়ে মে মাসে আবার উনি ফিরে যান কেদারনাথে। নীচ দিয়ে বয়ে চলেছে মন্দাকিনী নদী। সেখানে পঞ্চকেদার দর্শন করে আমরা রওনা হলাম চোপতা। যাবার পথটি এত সুন্দর, দুধারের অপূর্ব প্রাকৃতিক দৃশ্য, মনে হয় কেউ হাতে ছবি এঁকেছে। চোপতা একটি ছোট্ট গ্রাম, আসলে এই জায়গাটি জমজমাট কারন এখান থেকেই উঠে গেছে তুঙ্গনাথের পথ। এই তুঙ্গনাথকে পঞ্চকেদারের এক কেদার বলাহয়। যাঁরা ওপড়ে যেতে চান না, পারেন না তাঁরা এই চোপতায় বিশ্রাম নেন।অনেক দোকানপাঠ আছে, ছোট ছোট ঘড়ের থাকার ব্যবস্থা আছে।
চোপতা থেকে ৩ কিমি ওপরে উঠতে হয়। হেঁটে বা ঘোড়ায় করে ওঠা যায়। পুরো পথটাই চড়াই। তাই হেঁটে উঠতে বেশ কষ্ট লাগে তবে তারাহুড়ো না করে ধীরে সুস্থে সময় নিয়ে হাঁটলে অনায়াসেই চলে যাওয়া যায়। ১০ টাকায় লাঠি ভাড়া পাওয়া যায় যা ওপরে উঠতে খুবই সাহায্য করে। পথের শোভা এত ভাল, সবুজ উপত্যকা, দুধারে রডোডেনড্রনের প্রচুর গাছ, লাল গুচ্ছ ফুলের সমারোহ, তাতে নানারকমের পাখীর সমারোহ, বিশাল বিশাল পাইন গাছ। দুরে তুষারবৃত নাম না জানা হিমালয়ের সারি সারি শিখর। ৩ কি মি ঐ চড়াই রাস্তা যেতে আমাদের সময় লেগে গেল ৩ ঘন্টা,যাবার পথে বিশ্রাম নিতেই হয়, অনেকেই হেঁটে উঠছেন আবার ঘোড়াতেও । প্রতি ১ কি মি অন্তর একটি করে চায়ের দোকান বা বিশ্রাম নেবার জায়গা, খাবার জলের ব্যবস্থা আছে। এক এক সময় মনে হচ্ছিল আর পারবনা কিন্তু কিছু পরেই কোথা থেকে মনে জোর পেয়ে আবার হাঁটা শুরু।অবশেষে দূরে পতাকাগুলো যখন দেখতে পেলাম, সারা শরীরে শিহরণ জাগল, হাঁ পেরেছি।
তুঙ্গনাথের পথে...
খাড়াই পথ...তুঙ্গনাথ মন্দিরে যাবার জন্য
তুঙ্গনাথ মন্দিরের সাথে কেদারনাথ মন্দিরের অনেক মিল।অনেকেই পূজো দিলেন। তুঙ্গনাথ থেকে আরো দেড় কি মি ওপরে চন্দ্রশিলা, এক অসাধারন ভিউ পয়েন্ট। আমি আর যেতে পারিনি। মন্দিরে দেব দেবী ইত্যাদী নিয়ে যা কথিত আছে, এইসব জায়গায় সে সব গল্প শুনতে যেমন খারাপ লাগেনা আবার তার বাইরে গিয়েও নিজেকে খুঁজে পাওয়া যায়, এমনই চারিদিকে প্রাকৃতিক দৃশ্য, নিরালা শান্ত পরিবেশ, মনে হয় না পৃথিবীতে আছি, ওপরে ওঠার যে কষ্ট তা নিমেষে ভ্যানিশ হয়ে যায়, নিজেকে সমস্ত দূ:খ কষ্টের বাইরের এক অন্য গ্রহের মানুষ বলে মনে হয়।প্রায় ঘন্টা খানেক ওপরে কাটিয়ে নীচে নেমে আসি এক বুক ভাললাগায় বুঁদ হয়ে, কেউ কারুর সাথে কথা বলিনা, আমাদের সাথে সাথে সূর্যদেব নেবে আসে দূরে হিমালয়ের নীচে সারা আকাশের গায়ে লাল হলুদ আবীর মাখিয়ে। সন্ধ্যে হয়ে আসে, সারাটা দিন কেটে যায় এক অপার্থিব আনন্দে ভালবাসায়।
তুঙ্গনাথ মন্দিরের কিছু ছবি....
মনদিরের আশপাশের ছবি
তুঙ্গনাথ থেকে নাবার পথে সুর্য্যাস্ত
Name- Debasish Bhattacharya