প্রথম পর্ব :
একদিন ফেসবুকে চোখ রেখেছি, হঠাৎ নজরে এল পানপাতিয়া কল অভিযান ২০১৭ । সঙ্গে সঙ্গে ফোন শুভজিতদাকে। পুরোটা জানলাম, জানার পর আমার সারা শরীরে কাঁটা দিয়ে উঠল। আমি ভাবতেই পারিনি পানপাতিয়ার মত একটা অভিযানে আমি অংশগ্রহন করব। অনেক খরচ, অনেক সময়, অনেক কঠিন পথ। আমরা মোট ১৫ জন সদস্য। সবাই মিলে অনেক আলোচনা করেছি এই পানপাতিয়া নিয়ে। শেষ অবধি আমাদের দিন ঠিক হল 24/8/2017 থেকে 10/9/2017। দিন গোনার পালা শুরু করে দিলাম। তার মাঝখানে অনেক কিছু ঘটেছে। এখন অপেক্ষা সেই দিনের।
এই পানপাতিয়া নিয়ে অনেক পৌরানীক কাহিনী আছে। উত্তরাখণ্ডের চামলি জেলায় অবস্থিত হিন্দুদের বিখ্যাত তীর্থস্থানটির সম্পর্কে আমরা সবাই জানি।পূর্বে হারিদ্বার থেকে পদব্রজে 319 কিমি দূরের এই তীর্থস্থানে পূর্নার্থীরা আসত স্বর্গ লাভের আশায়। মহাভারতের বর্ণনায় দেখেছি দ্রৌপদী সহ পঞ্চ পাণ্ডবরা এই পথেই মহাপ্রস্থানের যাত্রা করেছিলেন। বদ্রিনাথ অঞ্চলের আশেপাশেই দেহত্যাগ করেন। সপ্তম শতকে আদি শঙ্কারাচার্য , নর -নারায়ন পর্বতের কোল দিয়ে প্রবাহিত অলকানন্দার গর্ভ থেকে প্রাপ্ত শালগ্রাম শিলাটি স্থাপন করেন তপ্ত কুণ্ডের নিকট।মূল মন্দিরের স্থাপন হয় এখানেই। ভূমিকম্প, তুষার ধ্বসে বারে বারে মন্দিরটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।ষোড়শ শতাব্দীতে গাড়োয়াল রাজা বর্তমান মন্দিরটির স্থাপনা করেন।বৌদ্ধিক স্থাপত্যের আদলে নির্মিত মন্দিরটিতে ভক্ত সমাগম হয় বছরে প্রায় 7 থেকে 8 লাখ। পুণ্যার্থী ছাড়া ও নিঃস্বার্গিক প্রকৃতির আকর্ষণে বহু মানুষের সমাগম ঘটে।
নর- নারায়ণ রূপে পূজিত বদ্রিবিশাল এর তীর্থ ক্ষেত্রটি নর-নারায়ন পর্বত দুটির মাঝে অবস্থিত। মন্দির এর পেছনে সকাল-বিকাল দৃশ্যমান পিরামিড আকৃতির অপরূপ যে শৃঙ্গটি বিরাজমান থাকে তা নীলকণ্ঠ। 6596 মিটার উচ্তার শৃঙ্গটি পর্বতারোহীদের কাছে বিশেষ আকর্ষণীয় ।তীব্র খাড়া ঢালের কারণে বহুদিন অপরাজেয় ছিল এই শৃঙ্গটি। অলকানান্দা নদীর উৎসটি বদ্রিনাথ থেকে মাত্র 9 কিমি দূরে। নীলকণ্ঠের দক্ষিণ-পশ্চিম ঢালে উৎপন্ন শতপন্থ হিমবাহ।নীলকণ্ঠ অভিযানের বেসক্যাম্প করা হয় এই শতপন্থ হিমবাহের উপত্যকায়। বেস ক্যাম্প 8 কিমি দূরেই রয়েছে অপূর্ব একটি হ্রদ শতপন্থ তাল। বরফ আর বোল্ডারের রাজত্বের মধ্যে দিয়ে চলে যাওয়া যায় এই স্বর্গ রাজ্যে। নীলকণ্ঠের দক্ষিণ-পূর্ব ঢালে রয়েছে আর একটি হিমবাহ- "পানপাতিয়া"।মাত্র 10কিমি দীর্ঘ,2 কিমি প্রশস্থ হিমবাহটি হল আমাদের এবারের বিচরণ ক্ষেত্র'।এই হিমবাহ থেকে উৎপন্ন নদীটি হল ক্ষীরগঙ্গা পূর্বে প্রবাহিত হয়ে ( জোশিমঠ- বদ্রিনাথ এর পথে) হনুমান চটির কাছে আলকানন্দার বুকে আত্মমসমর্পন করেছে।
আমাদের যাত্রা পথ এই ক্ষীরগঙ্গার উজান মুখী প্রবাহ পথে উৎস এ পৌঁছে আড়াআড়ি হিমবাহ টি অতিক্রম করেপানপাতিয়া প্রপাত মুখের কাছে পৌঁছনো, তার পর ডান দিকে বেঁকে চৌখাম্বা 3 এর পূর্ব দিক দিয়ে " পানপাতিয়া গিরিবর্ত" অতিক্রম করে গন্ধার পংগী উপত্যকার মধ্য দিয়ে কাঁচনি গিরিশিরা টপকে পৌঁছে যাবো দ্বিতীয় কেদার মদ মহেশ্বরে।এই প্রবাদ পথটির অনেক প্রচলিত পৌরাণিক উপাখ্যান রয়েছে। মন্দিরের পুরোহিত বদরিবিশালের পুজো করে একদিনে কেদার নাথের পূজো করত।সারাদিন কেটে যেত পথে পথে। পুরোহিত জায়া সময়এর অভাবে স্বামীকে কাছে পেতেন না। স্বামীকে কাছে পাওয়ার প্রত্যাশায় ঘোর তপস্যা করেন শিবের।শিব সন্তুষ্ট হয়ে পুরোহিত পত্নীর মনোবাসনা পূরন করলে দুর্ল্যঘনীয় দুটি পর্বত চৌখাম্বা-নীলকণ্ঠের উত্থান ঘটিয়ে। চার দেয়ালের সুউচ্চ প্রাচীর বদ্রিনাথ থেকে সরাসরি কেধারনাথএর যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়েছে তা নয় , বিচ্ছিন্ন করেছে গঙ্গোত্রী উপত্যকাকেও। 1934 সালে প্রখ্যাত ব্রিটিশ পর্বতারোহী জুটি এরিক শিপটন ও বিল টিলম্যান বদ্রিনাথ থেকে শতপন্থ হিমবাহের উচ্চতম প্রান্তে এসে একটি গিরিপথ(শতপন্থ কল) অতিক্রম করে আস্তে চেয়েছিলেন কেধারনাথ উপত্যকায় । সুম্পূর্ণ করতে পারেনি অভিযান, গন্ধর পংগী উপত্যকায় পথ হারিয়ে ফিরে আসে। দীর্ঘ দিন পর 80র দশকে পুনরায় শুরু হয় অভিযান।বিভিন্ন খ্যাতনামা অভিযাত্রীরা চেষ্টা করলেও ব্যর্থ হয়।1989 সালে ডানকান টাংস্টল এর নেতৃত্বে আসা ব্রিটিশ দলটি ক্ষীরগঙ্গার উপত্যকা ধরে অভিযান শুরু করে ও ব্যর্থ হন।এর দলনেতা জিম নোনমেকের নেতৃত্বে পানপাতিয়া হিমবাহ টি আড়াআড়ি অতিক্রম করতে সক্ষম হন।এঁরা পুনরায় আগের রাস্তায় ফিরে যান।2007 সালে দেবব্রত মুখার্জির নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের দল কৃতিত্বের সাথে বিপদজনক পান পাতিয়া হিমবাহের প্রপাত স্থান এড়িয়ে মদ মহেশ্বরের মন্দিরে পৌছে গিয়েছিলেন। যার অন্যতম সদস্য ছিলেন বেহালার শিক্ষক তপন পন্ডিত মহাশয়।আনন্দবাজার পত্রিকায় ধারাবাহিক ভাবে বেরিয়ে ছিল অভিযানের পর্ব গুলি। আজ আমাদের মত সাধারণ পর্বত প্রেমীদের কাছে পথটি উন্মোচিত হয়ে গেছে। নীলকণ্ঠ খাল, পান পাতিয়া কল, ইয়ানবুক কল অতিক্রম করে 14/15 দিনে পৌঁছে যাওয়া যায় বদ্রিনাথ থেকে কেধারনাথ ধামে। আমাদের পথ ইয়ানবুক কল অতিক্রম না করে কাঁচনি গিরিবর্ত টপকে মদ মহেশ্বর হয়ে রাঁশি।
দ্বিতীয় পর্ব :
২৪ শে আগস্ট হাওড়া থেকে ট্রেন ধরে ২৫ শে আগস্ট বিকেলে হরিদ্বার।। হরিদ্বারে কালিকমলীতে রাতের থাকায় ব্যবস্থা।। তার ফাঁকে হরিদ্বারে হর কি পৌরি ঘাটে একটু ঢুঁ মেরে আসা।। আগামী কাল আমরা রওনা দেব বদ্রীনাথের উদ্দেশ্যে।
কালিকমলীতে রাত কাটিয়েছি বেশ ভালোই। অবশ্য আমরা তিন চার জন একটু শুয়েছি বাকিরা সারারাত আড্ডা মেরে কাটিয়েছে। ভোর 5 টায় গাড়ি আসার কথা। তাই ভোর ৪ টে তে উঠে পড়লাম। ফোনের ঘন্টাটা বেজে উঠল। হেমন্ত ফোন করেছে, ওরা তিনজন আসছে দিল্লি থেকে। ওরা সময় মত চলে এসেছে হরিদ্বার কিন্তু পবন এখনও আসেনি, ফোনেও পাওয়া যাচ্ছেনা। ওদিকে গাড়ি এসে হাজির। ওর জন্যে আমরা সবাই অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছি। বাইরের চায়ের দোকান থেকে চা খেলাম সবাই। ঘড়ির কাঁটা তখন ৫ টা পেরিয়ে ৬ টার ঘরে। ওদিকে যেতে হবে সেই বদ্রীনাথ। শেষে ফোনে পাওয়া গেল। ও দিল্লি থেকে বাসে আসছে। হরিদ্বার থেকে এখনও ১ কিমি দুরে আছে। শেষ মেষ ৭ টার সময় পবন এসে হাজির। আমাদের লাগেজ সব গাড়িতে তোলা হয়ে গেছে।
পবন আসার সাথে সাথে গাড়ি ছেড়ে দিল বদ্রীনাথের উদ্দেশ্যে । প্রাতরাশ আমরা পথেই সারব। আমাদের আরেক সদস্য জীবন, সে আবার বাইক রাইডে গেছিল লাদাখ। সেখান থেকে বাইক নিয়ে চলে এসেছে। সে ঋষিকেশে গেছে তার বন্ধুর বাড়িতে বাইক রাখতে। সাথে গেছে দেবাশিস। ওরা ঋষিকেশ থেকে গাড়িতে উঠবে। ঋষিকেশ আসতেই ওরা উঠে পড়ল। এবার গাড়ি পাহাড়ী রাস্তা ধরল। আকা বাঁকা পথে গাড়ি চলেছে। মনে খুবই উৎসাহ সবার। একেকটা পাহাড়ী বাঁক ঘুরছি আর দৃশ্যপট ও বদলে যাচ্ছে। প্রায় ১০ থেকে ১২ ঘন্টা গাড়িতে যেতে হবে। দুপুর 2 টো নাগাদ গাড়ি থামল দুপুরের আহারের জন্য। দুপুরের খাওয়া সেরে গাড়িতে উঠে পড়লাম। এবার গাড়ি থামবে সেই বদ্রীনাথ।। বিকাল ৪ টে নাগাদ পৌঁছলাম যোশীমঠ। এখানে আমাদের সাথে দেখা হল রাওয়াতজির। ওনার সাথেই যাব আমরা। দেখা হল আমাদের গাইড প্রেমজি আর গুমানজির সঙ্গে। কিন্তু একটা খারাপ খবর কানে এসে পৌছাল। গাড়ি আর আগে যাবেনা, আগে ল্যান্ড স্লাইড হয়েছে। রাস্তা পুরো ধসে গেছে। তাই আমাদের থামতে হল গোবিন্দ ঘাটে। আকাশের মুখ ও ভার। শুরু হল বৃষ্টি। বৃষ্টির মধ্যেই লাগেজ নামানো হল গাড়ি থেকে। রাওয়াতজি একটা ঘর ঠিক করেছে এখানে। এখানেই আমাদের রাতে থাকতে হবে। ওদিকে শুভজিৎদা রাওয়াত এর সাথে গেছে রাস্তার হাল দেখতে। ওরা ফেরার পর সন্ধ্যা বেলায় চা খেয়ে একটা মিটিং হল। ওরা বলল রাস্তার অবস্থা খুব খারাপ তাই বদ্রীনাথ যাওয়া যাবেনা। বদ্রীনাথ গেলে আমাদের ১ দিন নষ্ট হয়ে যাবে। তাই আমরা আগামীকাল ২৭/০৮/২০১৭ তারিখে গোবিন্দঘাট থেকেই পথ চলা শুরু করব। কিন্তু চিন্তার ভাঁজ কপালে, বৃষ্টি হচ্ছে এখনও। এই সব
করতে করতে রাত হয়ে গেল। রাত ১০ টার সময় পাশের হোটেলে খাওয়া দাওয়া করে নিদ্রাগামী হলাম। আগামী দিন আমরা যাত্রা শুরু করব আমাদের বহু কাঙ্খীত পথের উদ্দেশ্যে।২৭ তারিখ সকাল ৬ টা চা এসে হাজির। আগের দিনের বৃষ্টি আজ সকালে উধাও। আকাশ পরিষ্কার হয়ে সূর্যের দেখা মিলেছে। আমাদের আজ প্রথম দিনের হাঁটা শুরু হবে। আমরা ব্যাগ গুছিয়ে নিলাম। সামনেই এক জায়গায় প্রাতরাশের ব্যবস্থা করা হয়েছে। সকাল ৮ টা পিঠে ব্যাগ তুলে বেরিয়ে পড়লাম। পিচের রাস্তা ধরে এগিয়ে চললাম। মনোরম পরিবেশ। কিছুটা চলার পর থামলাম প্রাতরাশের জন্য। এখানে মালবাহকরা সবাই একসাথে হয়েছে। মনোজজি ও এসছে আমাদের অভিযানের শুভকামনা জানানোর জন্য। খাবার খেয়ে সবাই মিলে চলল ছবি তোলার পালা। দারুণ এক মুহূর্ত। উত্তেজনা তখন আরো বেড়ে গিয়েছে। বদ্রীনাথ যেতে পারিনি তাই দূর থেকেই জয় বদ্রীনাথ জয় মদমহেশ্বর ধ্বনি দিয়ে পথ চলা শুরু করলাম। অনেক মানুষ চলেছে বদ্রীনাথ দর্শন করতে, কেউ হেঁটে কেউ ডুলি তে। বদ্রীনাথের রাস্তায় ধ্বস নামার কারণে আমরা গোবিন্দঘাট থেকে হাঁটা শুরু করেছি। যাব পান্ডূকেশ্বর। যে পথ আমাদের গাড়িতে যাওয়ার কথা ছিল সেই পথ পায়ে হেঁটে যেতে হচ্ছে। পান্ডূকেশ্বর থেকে গাড়ি ধরে যাব ক্ষীরাও নালার কাছে। যাই হোক পিচের রাস্তা এবার বা দিকে বাঁক নিয়ে উঠে গেছে উপরের দিকে। প্রথম দিন হাঁটা কষ্টকর, তাই ধীর গতিতে চলেছি। একটু চললেই হাঁপিয়ে উঠছি। বড় বড় গাছের সারির মাঝখান দিয়ে চড়াই পথ এঁকে বেঁকে উঠে গেছে। নীচ দিয়ে তীব্র গতিতে বয়ে চলেছে অলকানন্দা নদী। কিছুক্ষন বসলাম সেখানে। আমাদের অন্য সদস্যরা এগিয়ে গেছে অনেকটা। সামনে পড়ল একটা গ্রাম, রামদানার ক্ষেত চারিদিকে। গ্রামের ভীতর দিয়েই পথ। দূর থেকে দেখা যাচ্ছে সেই ধ্বসা রাস্তা। ওই পথেই আমাদের আসার কথা ছিল গাড়িতে। ঘন্টা দুয়েক চলার পর পৌছলাম গাড়ি রাস্তায়। আমাদের অন্য সদস্যরা তখন গাড়ি করে চলে গেছে ক্ষীরাও নালার উদ্দেশ্যে। আমরা 5 জন অপেক্ষা করলাম গাড়ি ফেরার। মিনিট দশেকের মধ্যে গাড়ি চলে এল, আমরা গাড়িতে উঠলাম। ৩০ মিনিট গাড়িতে চলার পর আসলাম আমাদের সেই পথের সামনে। ক্ষীরাও নালা। এখান থেকে আমাদের আসল পথের শুরু। গাড়ি থেকে নেমে বাঁ দিকের পাথুরে রাস্তা ধরলাম। বড় বড় বোল্ডারে ভরে আছে চারিদিক। আমাদের
গাইড প্রেমজি আর গুমানজি ও চলে এল। মালবাহকরা এগোতে শুরু করেছে । আমরাও চলতে শুরু করলাম। আমাদের পথের বাঁ দিক দিয়ে বয়ে চলেছে ক্ষীরাও নালা। প্রচন্ড তার স্রোত। একের পর এক বোল্ডার টপকে চলেছি। সামনে পড়ল একটা ছোট ব্রীজ। ক্ষীরাও নালা পেরতে হবে এই ব্রীজের উপর দিয়ে। ব্রীজ টপকাতেই আরো একটা বোল্ডার জোন। আবার ভাঙতে হল বোল্ডার বিছানো রাস্তা। সামনে সবুজের চিহ্ন দেখা যাচ্ছে। কিছুদুর এভাবে চলার পর হঠাৎ গোটা ভ্যালিটা মেঘে ছেয়ে গেল। শুরু হল বৃষ্টি। যে ভয়টা পাচ্ছিলাম সেইটাই জাঁকিয়ে বসল মনের মধ্যে। ব্যাগ থেকে পঞ্চু বের করে চাপিয়ে দিলাম। বৃষ্টির মধ্যেই পথ চলা, পথ ক্রমেই পিছল হয়ে উঠছে। চলতে খুব অসুবিধা হচ্ছে। ঘন্টা দুয়েক এভাবে চলার পর জঙ্গলের রাস্তায় প্রবেশ করলাম। বৃষ্টির কোন বিরাম নেই, জঙ্গলের পথ কাদায় পুরো মাখামাখি। ওই অবস্থাতেই পথ চলা। ঘন জঙ্গলে ঢাকা পুরো রাস্তাটা। সবুজের সমারহ। ঝি ঝি পোকার শব্দ আর নানা রকমের পাখির কোলাহল শুনতে শুনতে চড়াই উতরাই পথ অতিক্রম করছি। পথে দেখা হল ক্ষীরাও গ্রামের এক মানুষের সাথে। পিঠে বোঝা চলেছে দৈনন্দিন কাজে। ওনাকে জিঞ্জাসা করলাম ক্ষীরাও আর কতদুর? উনি বললেন 2 কিমি। ওনাকে বললাম এই গ্রামে কত লোক থাকে? বললেন দশ বারোটা পরিবার থাকে এখানে, কাজ বলতে মেষ পালন আর ওনার ঘোড়া আছে তিনটে। ঘোড়া গুলো উনি ভাড়ায় দেন মালপত্র বহনের জন্য।গ্রামের লোকেরা রোজ এই পথে ওঠে নামে। কী অদ্ভুত ওদের জীবন, সভ্যতার ছোঁয়া থেকে অনেক দুরে। সময় দুপুর দুটো, আরো এক ঘন্টা লাগবে আমাদের ক্যাম্পে পৌছাতে। কিছুটা চলার পর দেখা মিলল ক্ষীরাও গ্রামের। গ্রামের উপরেই দেখা যাচ্ছে আমাদের তাবু। আমাদের দেখে দৌড়ে এল গ্রামের কিছু বাচ্চা, ওদেরকে লজেন্স দিলাম। দেখা হল গ্রামের এক বয়ষ্ক মানুষের সঙ্গে, উনি প্রশ্ন করলেন কোথায় যাবেন? আমরা বললাম পানপাতিয়া। উনি তো শুনে চমকে গেলেন। বললেন খুব চড়াই রাস্তা আর খুব ভয়ংঙ্কর। আর বললেন উপরে প্রচুর বরফ। উনি আমাদের আশীর্বাদ করলেন। আমরা ওনাকে নমস্কার জানিয়ে ক্যাম্পের দিকে হাঁটা লাগালাম। ক্যাম্পে পৌছাতেই গরম চা, ভুজিয়া আর বিস্কুট যেন অমৃত। রোদের দেখা মিলল একটু। আমরা আমাদের তাবুতে ব্যাগ পত্র ঢুকিয়ে একটু বেরলাম ক্যামেরা নিয়ে। পথে অনেক পাখি দেখেছি, অন্তত একটা পাখির ছবি তুলতেই হবে। আমরা তিন জন একটা তাবুতে থাকব। আমি, গৌতম দা আর অমিতাভ দা। কিছুক্ষন পর ওয়েদার আবার খারাপ হয়ে গেল। ওদিকে ডিনারের আয়োজন চলছে। সন্ধা সাতটার সময় ডিনারের জন্য ডাক পড়ল। সবাই তাবু থেকে বেরিয়ে খাওয়া সেরে নিলাম। তারপর ঢুকলাম শুভজিতদাদের তাবুতে, আগামী দিনের পথ নিয়ে আলোচনা করলাম। চিন্তা হচ্ছে ওয়েদার নিয়ে। আলোচনা করে আমরা যে যার তাবুতে ঢুকলাম, তাবুতে ঢুকে কিছুক্ষন চলল আড্ডা। তারপর শুয়ে পরলাম এই ভেবে আগামী দিন যেন ওয়েদার টা পরিষ্কার পাই। রাত ৮ টার সময় নিদ্রাগামী হলাম।কাল যাত্রা শুরু।……..
Name- Tilak Pal
Age- 30
Profession- Business
City- kolkata
Hobbies- Trekking
Previous Tours- Deoria tal, Uttarakhand