বহু দিনের ইচ্ছে ছিলো ক্যাম্পিং করে সমুদ্রের গর্জন আর আকাশের চাঁদ একসাথে উপভোগ করবো সেটা অবশেষে বাস্তবায়িত হলো...
যাত্রা শুরুঃ ১ম দিন
যেহেতু আমরা ঢাকা থেকে যাত্রা শুরু করছি তাই সন্ধ্যা ৭ টার দিকে ঢাকা থেকে টেকনাফের উদ্দেশ্যে ।কোনো জ্যাম না থাকলে আশা করি সকাল ৫-৬ টার মধ্যেই টেকনাফ পৌঁছাব। সেখান থেকে একটু হেটেইচলে গেলাম সেইন্ট মার্টিনে যাওয়ার শীপ ঘাটে.. সকালে ৯ঃ৩০ এর দিকে শীপ ঘাট ছেড়ে সেইন্ট মার্টিন এর উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করলো,সামনে বিজিবি ক্যাম্প থেকে পারমিশন নিয়ে নাফ নদী দিয়ে শীপ বঙ্গোপসাগরে প্রবেশ করলো, তখন একটু আগের থেকে ঢেউ এবং পানির রং পরিবর্তন হতে শুরু করেছে সাগরে যত গভীরে যাচ্ছে ঢেউয়ের পরিমান বেড়েই চলছে, অবশেষে প্রায় ৩ ঘন্টা পর শীপ সেইন্ট মার্টিন ঘাটে নোঙর করলো। যেহেতু আমরা ক্যাম্পিং করবো সেহেতু আমাদের প্রকথম টার্গেট হচ্ছে জনমানবহীন এলাকায় যাবো সেটা এখন যত দূরেই হোক, তাই আমরা পশ্চিম বিচ ধরে হাটা শুরু করলাম, প্রায় ১ ঘন্টা হাটার পর এক স্থানীয় জেলের সাথে পরিচয় হলো সে আমাদের তাদের বাসায় ক্যাম্পিং করার জন্য বললো, আমরা তার সাথে গিয়ে দেখলাম ক্যাম্পিং হিসেবে আমরা আদর্শ জায়গা,খুব মানুষ যাতায়াত করে না বললেই চলে, তবে সাথে একটা ইন্টেরেস্টিং জায়গা ও বটে কারন জায়গাটার নাম হচ্ছে গলাচিপা, এর কারন হচ্ছে নাকি আমরা যেখানে ছিলাম সেখান থেকে পূর্ব এবং পশ্চিম বিচ একসাথে দেখা যায় তাই এমন নাম। আমাদের কাছে ব্যাপারটা খুব ইন্টারেস্টিং লেগেছে..!! তো পছন্দ মতো বিচের পাশে তাবু ক্যাম্পিং করে ফেললাম, ক্যাম্পিং করে নাস্তার জন্য অনেক হোটেল আছে সেখান থেকে করে ক্যাম্পিং স্পটে চলে আসলাম, আমরা রাতের জন্য দোকান থেকে যাবতীয় রান্নার জিনিস কিনে নিয়ে আসলাম কারন আমরা চাচ্ছিলাম যার বাসার সামনে ক্যাম্পিং করবো তার বাসায় রান্না-বান্নার ব্যাবস্থা করতে, তো তার বাসায় সিলিন্ডার গ্যাস ছিল তাই আমাদের আর বেশি সমস্যাতে পরতে হয়নি রান্না-বান্না নিয়ে। তো সেই বিকেলটা বলা যায় বিচে ফুটবল খেলেই কাটিয়ে দিলাম..!!!
ছেড়াঁ দ্বীপের উদ্দেশ্যেঃ ২য় দিন
পরেরদিন আমাদের টার্গেট হচ্ছে ছেড়াঁ দ্বীপ যাবো, এর মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে মূল বিচ থেকে কিছু অংশ আলাদা হয়েছে, সেটা ছবিতেই দেখতে পাবেন। জোয়ার ভাটার ওপর নির্ভর করবে কিভাবে যাবেন, তবে যাদের ট্যাকা বেশি তারা ট্রলারে যেতে পারেন ছেঁড়াদ্বীপ,আর যারা আমার মত ব্যাকপ্যাক ট্রাভেলার্স
তারা হেঁটে যেতে পারেন আর যারা সাইকেল নিয়ে যেতে চান তাদের বলছি,ভাই হেঁটে যান আর সাইকেলের ভাড়ার টাকাটা দিয়ে থেমে থেমে ডাব খান প্রাণ ভরে যাবে। সাইকেল নিয়ে যাওয়াটা কষ্ট বেশি তাই হেটে গেলেই পারফেক্ট,কারন সুন্দর সুন্দর দৃশ্য দেখতে দেখতে চলে যাবেন, অথবা ট্রলার ভাড়া করেও যেতে পারবেন সেক্ষেত্রে ওদের নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ফিরে আসতে সেটা আমি বিরক্ত মনে করি, তাই দলবদল নিয়ে বিচ ধরে শুরু করলাম হাটা, প্রায় ঘন্টা খানেকে চলে গেলাম। একদম ভোরে বের হয়ে গেলাম রোদের চিন্তা করে সেখান থেকে এসে সমুদ্রে গোসল শেষে নাস্তা করে নিলাম, বিকেলে সাইকেল ভাড়া নিয়ে পুরো সেইন্ট মার্টিন বিচের এপাড় ওপাড় গেলাম, যেটা অসাধারণ থ্রিলিং যেটা ভাষায় প্রকাশ করা যাবেনা। রাতে ক্যাম্প ফায়ার করবো তাই বাজার থেকে সমুদ্রের বিভিন্ন মাছ কিনে আনলাম বারবিকিউ করার জন্য, চাইলে হোটেল থেকেই করে আনতে পারেন তবে আমরা ঢাকা থেকে কয়লা,শিক নিয়ে গিয়েছিলাম তাই ঝামেলা হয়নি। সেই রাতটা আকাশ ভরা তারা। তার মাঝে ক্যাম্প ফায়ার উফফফফফ.!!!! বলে বুঝাতে পারবো না জোয়ারের সময় সমুদ্রের উত্তাল ঢেউ মুগ্ধ করে ফেলেছে আমাদের.....!!!
দ্বীপে ঘরাঘুরিঃ ৩য় দিন
পরেরদিন সকালে গিয়েছিলাম সাইকেল চালিয়ে স্থানীয়র বাসায়, সেখান থেকে এক জেলের সাথে সমুদ্রে মাছ ধরার কথা বলে আসলাম, দুপুরে তাদের সাথে ট্রলারে করে নিয়ে যাবে রাত ১০ টার সময় সমুদ্র থেকে ফিরে আসবে, মাছ ধরার সব তারাই ব্যাবস্থা করবে। বলা চলে ট্যুরের সব থেকে রিস্কি একটি এক্টিভিটিস, কেও যাবে তো কেও যাবে না সেই নিয়ে ভিষন ক্যাচাল করার পর আর যাওয়া হলো না, তবে বলা যায় তাদের সাথে গেলে লাইফের এডভেঞ্চার কি সেটা উপলব্ধি করা যেত, আর আপনি যদি টপ লেভেলের ট্রাভেলার হয়ে থাকেন তাহলে তাদের সাথে মাঝ সমুদ্রে যেতে পারেন ৫-৬ দিনের জন্য, ট্রলারের মধ্যেই সব খাওয়া-দাওয়া, এদের মতো কলিজা আমাদের নেই তাই এইখানেই চুপ...!!তাই কি আর করব? আলস ঘরাঘুরি করে কাটিয়ে দিলাম!!
ঢাকায় ফেরাঃ ৪র্থ দিন
পরের দিন সকালে ওখানে কাটিয়ে ঢাকায় ব্যাক করবো তাই ২ টার দিকে রওনা করলাম ওনাদের বাসা থেকে কারন শীপ ঘাটে যেতে প্রায় ঘন্টা খানেক লাগবে তাই দেরি না করে ভ্যান নিয়ে চলে গেলাম, ভাইরে ভাই ভ্যান ওয়ালা একেকটা ডাকাত বললেই ভুল হবে ২০ মিনিটের পথ ৩০০ টাকার নিচে আসবেই না অথচ যখন নরমালি শীপ থাকে না তখন ৮০-১০০ টাকা ভাড়া থাকে। ঘাটে এসে টিকেট দেখিয়ে শীপে উঠে বঙ্গোপসাগের সূর্য অস্ত দেখতে দেখতে টেকনাফ ঘাটে চলে আসলাম। সেখান থেকে ফিরার ঢাকার টিকেট ছিলো বাস উঠেই ঘুম, এক ঘুমে কুমিল্লার বিরতি সেখান থেকে ঢাকায় আরেক ঘুমে…
কিভাবে যাবেনঃ
কলকাতা থেকে ঢাকাগামী ট্রেন,বাস,প্লেন,শীপ মোটামুটি সব ভাবেই আসা যায়, আগে বড়লোক্স ট্রাভেলার্স দের বিবরন দেই তারপর নাহয় আমার মতো ব্যাকপ্যাক ট্রাভেলার্স এর বিবরন দেবো। কলকাতা-ঢাকা-কলকাতা প্রতিদিন প্রায় ৮ টা ফ্লাইট পরিচালনা করে। যেমন : স্পাইজেট,ইন্ডিগো,এয়ার ইন্ডিয়া,বিমান বাংলাদেশ,নভোএয়ারের আরো বিভিন্ন ফ্লাইট আছে, সেখানে রাউন্ডট্রিপ প্রায় ১০ হাজার পরবে। তারপর ঢাকা থেকে বাই এয়ারে কক্সবাজার হয়ে যেতে পারেন সাথে কক্সবাজার ও এড করতে পারেন প্লানে।ঢাকা-কক্সবাজার-ঢাকা রাউন্ড ট্রিপ ৭ হাজারের মতো। সেখান থেকে টেকনাফ শীপ ঘাট ২ ঘন্টা লাগবে যেতে।
খরচ এর হিসাবঃ
এবার আসি শীপের টিকেট ঃ টেকনাফ থেকে সেইন্ট মার্টিন শিপের টিকেট ওপেন ডেক ৭০০ টাকা, ইকোনোমি ৫৫০ টাকা, ব্রিজ ডেক ৮০০-৯০০ টাকা। আর এসি শিপ এ করে গেলে এই খরচ ১০০০-১৬০০ পর্যন্ত হয়। বিঃদ্র ঃ শিপ টিকেট রাউন্ড টিকেট হয়(যাওয়া এবং আসা মিলে) আরো হোটেল বিভিন্ন ধরনের আছে যে যেমন চায় ওরকম ই আছে, বিচের পাড়ের হোটেল এভারেজে ১৫০০ থেকে শুরু, মান ভেদে দাম উঠানামা করে, গড়ে ১০০০-৫০০০ হয় সিজনে, তবে অফ সিজনে কিছু হোটেল খোলা থাকে যেগুলার ভাড়া ৫০০ এর মতো। এবার আসি আমার মতো ব্যাকপ্যাক ট্রাভেলার্স দের হিসাব নিয়ে, কলকাতা থেকে ঢাকাগামী বহু বাস আছে, শ্যামলী,সোহাগ,রোয়েল,সৌহার্দ,গ্রিন লাইন,ইত্যাদি, নন এসি ৮০০-১২০০ টাকা, আর এসি ১৬০০-২২০০ টাকা। যদি আরো কমে যেতে চান সেই ব্যাবস্থা ও আছে শিয়ালদহ থেকে ট্রেনে বনগাঁর থেকে বেনাপোল হয়ে তবে একটু আরাম আয়েসে আসতে চাইলে মৈত্রি এক্সপ্রেস ট্রেনে আসতে পারেন, ভাড়া ওখান থেকে মনে হয় ১৭০০ রুপি। ঢাকা থেকে টেকনাফ বাস ভাড়া ৯০০ টাকা নন এসি, আর এসি ১৪০০ থেকে ২৫০০ পর্যন্ত আছে। আর খাবারের খরচ নিজেদের ওপর ডিপেন্ড করে, সি ফুড বেশি, যেমন সমুদ্রের মাছ বেশি তাই ডেইলি গড়ে ৪০০-১০০০ টাকার মধ্যে খেতে পারবেন।আমাদের এই ট্যুরের তাবু ভাড়া সহ সব খরচ নিয়ে মাত্র ৪৫০০ টাকা খরচ হয়েছিলো জন প্রতি ১১ জনের দল ছিলাম। বিঃদ্র ঃ ওপরের সব হিসাব টাকায় দেয়া,রুপিতে কনভার্ট করলে অনেকটাই কম হবে আপনাদের ক্ষেত্রে। বলা যায় কলকাতা-কলকাতা এভারেজে ব্যাকপ্যাকিং ভাবে চলতে পারলে ৩ রাত ৪ দিন সেইন্ট মার্টিন ট্যুরে ৮০০০ টাকার বেশি লাগার কথা না।আর হ্যাঁ, যেখানে সেখানে কোনো প্রকার ময়লা আবর্জনা, চিপসের প্যাকেট এবং পানির বোতল ফেলা থেকে বিরত থাকবেন।
অন্যতম আকর্ষণঃ
সেইন্ট মার্টিন দ্বীপ এর অন্যতম আকর্ষণ হল এর নীল আকাশের সঙ্গে নীল জলের মিতালি।এটি বাংলাদেশের একমাত্র প্রবাল দ্বীপ। পুরো দ্বিপটিরই বিভিন্ন বিচ অপূর্ব ভাবে সজ্জিত। তাছাড়া আপনি ঘুরে আসতে পারেন ছেরাদ্বিপ। এটি পুরতাই প্রবাল পাথরের উপরে অবস্থিত।
Name- Mahmudur Rahman Anik
Profession- Student
City- Dhaka,Bangladesh
Hobbies-Travelling