Link to previous parts: 1. Panpatia Trek Part 1 2. Panpatia Trek Part 2
আজ 2 রা সেপ্টেম্বর আবহাওয়া খারাপের কারনে পার্বতী গলি বেসে থাকতে হয়েছিলো....
আগের দিন একটা বিভৎস দিন কাটিয়ে কখন যে ঘুমিয়েছি কিচ্ছু খেয়াল ছিলনা। ঘুম যখন ভাঙল ঘড়িতে তখন 9 টা বাজে। বাইরে ঘন কালো মেঘ আর মুষলধারে বৃষ্টি। মনের ভিতর চরম আতঙ্ক, আজকেও যদি আমাদের এখানে থাকতে হয় তাহলে তো সব গড়বর হয়ে যাবে। না বৃষ্টি কমার কোন লক্ষন দেখছিনা। আমাদের গাইড জানিয়ে দিল আজ আমরা পারবতী কল বেস ক্যাম্পে ই থাকব। কিছু করার ছিলনা আমাদের, প্রকৃতির কাছে সব কিছুই তুচ্ছ। বাইরেও বেরতে পারছিনা এত খারাপ আবহাওয়া, সারাদিন তাবুর মধ্যেই বসে কেটে গেল। ওদিকে অমিতাভদার অবস্থা আরও খারাপ হচ্ছে। গায়ে প্রচন্ড জ্বর, এই অবস্থায় অমিতাভ কে কোন মতেই উপরে নিয়ে যাওয়া সম্ভব নয়। কাল কে সবাই কি ডিসিশন নেই দেখা যাক। তাবুর মধ্যেই লাঞ্চ সারলাম, বাইরে প্রবল হাওয়া আর বৃষ্টি। খাওয়ার কোন ইচ্ছাই নেই, কোন রকমে একটু খেলাম। সারাদিন তাবুতে বসে আর ভাল লাগছিলনা। মোবাইলটা খুলে একটু গান চালিয়ে দিলাম, যদি মুডটা একটু ভাল হয়।। কানে ভেসে আসছে অনবরত এভালেঞ্চের বিকট শব্দ।। গান শুনতে শুনতে চোখটা বুজে এল, ঘুম যখন ভাঙল তখন সন্ধ্যার অন্ধকার নেমে এসেছে।। সাতটা নাগাদ রাতের খাবার চলে এল তাবুতেই, কোনরকমে একটু খেলাম। কোন রুচি নেই খাওয়ার।। তখনও বৃষ্টি পড়ছে এক নাগারে। মনে ভেসে উঠছে পুরানো স্মৃতি, ভগবানের কাছে একটাই প্রার্থনা কালকে যেন আবহাওয়া ভাল হয়ে যায়। মনে একরাশ উৎকণ্ঠা নিয়ে ঘুমাতে গেলাম।
আজ ৩/৯/২০১৭ পার্বতী কল বেস ক্যাম্প থেকে স্নো ফিল্ড ক্যাম্প 1 : গাইডের ডাকে ঘুম ভাঙল। গরম চা খেয়ে বাইরে বেরলাম। বাইরে বেরতেই বিষ্ময়ে হতবাক হয়ে গেলাম। এত সুন্দর একটা জায়গা কল্পনাই করতে পারিনি। চারিদিক থেকে ঘিরে রেখেছে বিশাল বিশাল সব পাহাড়। তার মাঝে আমাদের ক্যাম্প। সামনে দেখা যাচ্ছে আমাদের আজকের পথ। রোদ ঝলমলে পরিবেশ। সব ভেজা জিনিস বাইরে বের করে শুকাতে দিলাম। অমিতাভদা কিছুতেই বাইরে বেরচ্ছেনা। গাইডজীকে বলা হল সে কথা, আমরা সবাই এক হলাম। মিটিং করে ঠিক করলাম অমিতাভদা , অঙ্কিত আর গৌতমদা কে নীচে নামানো হবে। টিমের ডিসিশন ই চুড়ান্ত। ওদের সাথে ৪ জন থাকবে। কিছু করার ছিলনা এই ডিসিশন নেওয়া ছাড়া। গাইড বলল ‘জলদি রেডি হোকে খানা খা লো, নিকাল না পারেগা’। সকাল ৮ টায় বেরিয়ে পড়লাম স্নো ফিল্ড ক্যাম্প 1 এর পথে। ওদের তিন জনকে বিদায় জানালাম। ওরা ফিরে চলল সেই পুরানো পথে, আমরা এগিয়ে চললাম। গাইড আগে বেরিয়ে গিয়ে রোপ ফিক্সড করে দিয়েছে। পাহাড়ের গা বেয়ে চড়াই পথ সোজা উপরের দিকে উঠে গেছে। একটু চললেই দম ধরে আসছে। অক্সিজেনের অভাব টের পাচ্ছি ভালোই, সামনেই রোপ ফিক্সড করা আছে, ধীরে ধীরে উঠে এলাম সেখানে।
উচ্চতা প্রায় 5000 মিটার। নিঃশ্বাস প্রশ্বাসের তুমুল লড়াই চলছে। একে একে রোপ ধরে উপরে উঠতে লাগলাম। দম যেন আটকে আসার জোগার। অতি কষ্টে পেরিয়ে গেলাম সেই জায়গা জায়গা।একটা বাঁক ঘুরতেই দেখা মিলল পানপাতিয়া তুষার স্রামাজ্যের কিছুটা অংশ। আরম্ভ হল তুষার পাত। আমরা আমাদের লক্ষ্যের খুব কাছে। সারা শরীর কাঁটা দিয়ে উঠল। দুপুর ৩ টে নাগাদ এসে হাজির হলাম স্নো ফিল্ড ক্যাম্প 1 এ। সামনে রোদের আলোয় ঝলমল করছে মাউন্ট পার্বতী। সে রূপ ভাষায় প্রকাশ করা যাবেনা। গত দুদিনের ওই চরম প্রকৃতির তান্ডব দেখেছি, আর আজ আমাদের হিমালয় দুহাত ভরে আশীর্বাদ করছে। কল্পনার অতীত। এখানে পৌছে সবার আগে আমরা পূজা পাঠ সারলাম। ভগবানের কাছে প্রার্থনা করলাম আগামী কয়েকটা দিনের জন্য। তারপর চলল ছবি তোলা আর তাবুতে বসে জমিয়ে আড্ডা। সে দিন গুলো ভোলার নয়। ধীরে ধীরে অন্ধকার নেমে আসছে হিমালয়ের বুকে। জনমানব হীন হিমালয়ের অসাধারণ সৌন্দর্য উপভোগ করছি আমরা কজন। সারা শরীর জুড়ে অদ্ভুত এক শিহরণ খেলে যাচ্ছে। কাল থেকে তুষার সাম্রাজ্যের উপর দিয়ে চলা শুরু।। সন্ধ্যা সাতটার সময় ডিনারের ডাক পড়ল। বাইরে তাপমাত্রা - 6 ডিগ্রির কাছাকাছি। ডিনার সেরে যে যার তাবুতে।। কিছুক্ষন চলল গল্প। তারপর গেলাম ঘুমাতে। আগামীর অপেক্ষায়।
আজ ৪ ই সেপ্টেম্বর। আমরা আজ যাব স্নো ফিল্ড ক্যাম্প ২ এর দিকে। আজ আমাদের যেতে হবে ৫০০০ মিটার থেকে ৫২০০ মিটার উচ্চতায়। সকালে ঘুম ভাঙার পর চা দিয়ে গেল আমাদের গাইড। ঘড়িতে সকাল ৫.৩০। স্লিপিং ব্যাগ ছেড়ে বেরোলাম বাইরে। সামনের পাহাড় চূড়া গুলো সব মেঘে ঢাকা। মাঝে মধ্যেই পাশের পাহাড় থেকে খশে পড়ছে টন টন বযফের চাই। হাঁড় হিম করা দৃশ্য। সকালের খাবার চলে এল, খাবার বলতে ছোলা আর গুড়। ওই খেয়ে আমরা বেরোবো। পায়ে গেইটার লাগিয়ে আমরা বেরিয়ে পরলাম। আজ পুরো পথটাই বরফের উপর দিয়ে চলতে হবে। চারিদিকে বিশাল বিশাল ক্রিভাস হাঁ করে আছে। সামনে দেখা যাচ্ছে একটা বিশাল বরফের হাম্প, ওইটা টপকে পানপাতিয়া স্নো ফিল্ড। শুরু হলো ফাইনাল মার্চ। তাপমাত্রা হিমাঙ্কের অনেক নিচে। সেই আকাশ ছোঁয়া হাম্পটা ক্রশ করা শুরু করলাম। একসময় আমরা স্নো ফিল্ডের বুকে। চারিদিকে শুধু বরফ আর বরফ। মনে মনে প্রমাদ গুনলাম, স্নো ফিল্ডের আকাশ তখন মেঘের দখলে।
বাম দিকে দেখা গেল সেই শিপটন কল। হঠাৎ মেঘের ফাঁক থেকে একচিলতে রোশনাই। ঝকঝক করে উঁকি দিচ্ছে একটা প্রকান্ড বরফের দেওয়াল, পশ্চিম দিকে ফুটে বেরোচ্ছে মেঘের ঘোমটার আড়াল থেকে। আহা!!! দুধ সাগরের জাহাজ চৌখাম্বা (৭১৩৮ মিটার)। দক্ষিনে দুই পাহাড়ের মাঝ দিয়ে দেখা যায় পানপাতিয়া শৃঙ্গ। একসময় বসে পড়লাম, মাথার উপর প্রখর রবির কিরণ। প্রকৃতির রূপ যেন ঝলসে দিচ্ছে। কখনো ডাইনে কখনো বাঁয়ে, চৌখাম্বার কোল ঘেষে এগিয়ে চোল্লাম। দুপুর 2 টো, সামিট থেকে মাত্র ৪ কিমি দূরে। উচ্চতা ১৭৫০০ ফুট। চারদিকে কূহেলিকার বলয়। গোটা তুষার প্রান্তর ঢেকে গেল কুয়াশার চাদরে। এ অবস্থায় আন্দাজে চলা মানে বিপদ, আমরা বসে পড়লাম ওই বরফের উপরে। ১ ঘন্টা কেটে গেল ওই ভাবেই। সেদিন আমরা ওখানেই ক্যাম্প করতে বাধ্য হোলাম। ক্রমে হোয়াইট আউট কেটে গিয়ে সোনালী রঙে রেঙে উঠলো আসপাশের শৃঙ্গ।রাত ১ টা। পূব আকাশে জ্বলজ্বল করছে শুক্ল পক্ষের চাঁদ। সারা তুষার প্রান্তর ধুয়ে যাচ্ছে মায়াবী চন্দ্রীমায়। ক্রমে ভোর হলো। সূর্যের প্রথম আলো গিয়ে পড়লো চৌখাম্বার শিখরে। সকাল ৬ টায় আবার শুরু হলো অভিযান।আজ আমাদের সামিট ডে।
৫ ই সেপ্টেম্বর সকাল ৮.২০ তুষার প্রান্তরের উপর দিয়ে এগিয়ে চলেছি পানপাতিয়া কলের দিকে।
ওই দিনটা সত্যি ভোলার নয়। প্রকৃতি সব উজার করে দিয়েছিলো আমাদের। আমাদের পিছনে বিশাল চৌখাম্বা জ্বল জ্বল করছে। চোখ ফেরানো দায়। চারিদিকে অজস্র জানা-অজানা শৃঙ্গ ঘিরে রেখেছে তুষার প্রান্তর। নীলকন্ঠ, পার্বতী, বালাকুন। অনেক দূরে দেখতে পাওয়া যায় নন্দাদেভী কে। আমাদের ঠিক সামনে পানপাতিয়া শৃঙ্গ। এ জায়গা ছেড়ে যেতে সত্যি ইচ্ছা করছিলো না, কিন্তু ইচ্ছা না থাকলেও উপায় নেই। যেতে তো হবেই। একসময় পৌছে গেলাম পানপাতিয়া কলে (৫৪০০ মিটার)। সবাই সবাইকে জরিয়ে ধরলাম। ভীষণ আনন্দের এক মূহুর্ত। এখানে বেশি থাকা টা ঠিক নয়, যখন তখন আবহাওয়া খারাপ হতে পারে। তাই কিছু সময় এখানে কাটিয়ে ছবি সংগৃহীত করে এবার নামার পালা। একটা রিজ ধরে পানপাতিয়া কলের উপরে এসে দাঁড়ালাম। রোপ লাগানো হলো। এখান থেকে দেখা যায় গোটা গান্ধারপুংগী উপত্যকা। বরফের চাদরে মোড়া। কল থেকে অনেক নীচে নেমে গেছে খাড়া বরফের ঢাল। একে একে নেমে এলাম সবাই। এবার আমরা গান্ধারপুংগী উপত্যকায়। এটা কেদার ভ্যালির অংশ। আর কলের ওইদিকে অলকানন্দা ভ্যালি। এই পানপাতিয়া হলো অলকানন্দা আর কেদার ভ্যালি সংযোগকারী পাস। এখান থেকে আমরা যাবো সুজল সরোবর। সেখানেই রাতের থাকার ব্যবস্থা। আমাদের সকলের প্রিয় সুজল মুখার্জির নাম অনুসারে এই তালটার নামকরণ করা হয়। উনি উল্টো দিক থেকে অর্থাৎ মদমহেশ্বরের দিক থেকে পানপাতিয়া আসতে চেয়েছিলেন, তখন পথ ভুল করে উনি উপস্থিত হন এই তালের সামনে। উল্টো পথে পানপাতিয়া কল ক্রশ করা অসম্ভব ছিল। তাই তিনি এখান থেকে ফিরে যান। তাই তার নাম অনুসারে নাম রাখা হয় সুজল সরোবর। সুজল সরোবরে রাত কাটিয়ে সকাল সকাল আমরা বেরিয়ে পড়লাম মদমহেশ্বরের উদ্দেশ্যে। পথে পরবে কাছনি ধার।। কাছনি ধার খুবই মারাত্মক তার ছুরির ফলার মত ধারালো পাথরের জন্যে।
এই কাছনি ধারে ঘটে গেলো এক অদ্ভুত ঘটনা। পথ চলছি হঠাৎ নামলো তুমুল বৃষ্টি, আর সাথে শিলা বৃষ্টি। এত বড় বড় শিল যে মাথা ফেটে যাওয়ার জোগাড়। কোন উপায় না দেখে একটা পাথরের খাঁজে একটা পলিথিন দিয়ে শেল্টার বানিয়ে বসে পড়লাম। এক ঘন্টা কেটে গেল বৃষ্টি থামার কোন আভাস নেই। চারিদিক নিমেষে সাদা। মেঘের কুন্ডলি, কিছু দেখা যাচ্ছে না সামনে। আমাদের বাকি সাথীরা এগিয়ে গেছে সামনে। হঠাৎ বিশাল জোরে বাজ পড়ার শব্দ। আমরা সামনের দিকে এগিয়ে গেলাম। সামনে গিয়ে দেখি উপর থেকে জলের ধারা হুরমুর করে নেমে আসছে। আর সামনের রাস্তা টা দুভাগে ভাগ হয়ে গেছে। কিন্তু বাকিরা গেল কোথায়!!! বসে পড়লাম ওখানেই। চরম উৎকণ্ঠা, হঠাৎ নজরে এল উপর থেকে এক ব্যক্তি নেমে এসে আমাদের হাত ধরে পার করিয়ে দিল ওই ফেটে যাওয়া অঞ্চল টা। সব ভিজে একাকার। তারপর উনি আমাদের 4 টে ব্যাগ নিয়ে হন হন করে হাঁটা লাগালো মদমহেশ্বরের দিকে। তখন সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসছে। আমাদের পা পুরো অসার। পকেট থেকে হেড টর্চ টা বের করে ওই আলোতে হাটা শুরু করলাম। ততখনে বৃষ্টি কমে গেছে। রাস্তা পুরো কাদায মাখামাখি। কিন্তু ওই লোকটা কোথায় চলে গেল চোখের নিমেষে। লোকটাকে আমরা চিনিওনা। আর কি করা যাবে। একটু করে চলছি আর আছার খাচ্ছি। ততখনে নীচ থেকে চলে এসেছে আমাদের কিছু মালবাহক আমাদের নিতে। আমরা জিঞ্জেস করলাম বাকিরা কোথায়? ও বলল সব ঠিক হ্যা। আপ লোগো কো লেনে কে লিযে নীচে সে উপার ভেজা। ওরাও চিন্তিত আমাদের কারনে।আপ লোগো কা ব্যাগ কাহা হ্যা? আমরা বোললাম সব ঘটনা। ওরাও অবাক হয়ে গেল। ওরা বলল লেকিন হাম লোগ তো কিসিকো নেহি দেখা রাস্তে মে। আমরা ভেবে নিয়েছ সব কিছু গেল আরকি। এই ভাবেই রাত 8 টা নাগাদ অন্ধকারের মধ্যে এসে হাজির হলাম মদমহেশ্বর। সারা শরীর জুড়ে শীহরন খেলে গেল, দেখলাম মন্দিরের উঠানে সাজানো আছে আমাদের ব্যাগ। শুধু বিস্মিত হওয়া ছারা আর উপায় ছিলনা। লোকটার কোন খোঁজ আমরা পাইনি শেষ পর্যন্ত। পরদিন মদমহেশ্বর মন্দিরে পুজো দিয়ে বেরিয়ে পড়লাম রাশির উদ্দেশ্যে। শেষ হয়ে ও হলোনা শেষে।
সকলের সুবিধার জন্য itinerary দিয়ে দিলাম
Day 1 :- haridwar to badrinath by car
Day 2:- badrinath to khirao(drive 55km and trek 4km)
Day 3:- khirao to Shepherd camp
Day 4:- Shepherd camp to snout camp
Day 5:- snout camp to moraine camp(4300 mtr)
Day 6:- Acclimatization day in moraine camp
Day 7:- Moraine camp to Parvati col base
Day 8:- Parvati col base to panpatia snowfield camp
Day 9:- panpatia snowfield to cross panpatia col(5260 mtr) then move to Sujol Sarovar
Day 10:- Sujol soravar to madamaheswar
Day 11:- madamaheswar to Ransi
Day 12:- Ransi to Haridwar by car
আবহাওয়া যদি খারাপ হয় সেজন্য হাতে প্রয়োজনীয় দিন থাকা দরকার।।
Name- Tilak Pal
Age- 30
Profession- Business
City- kolkata
Hobbies- Trekking
Previous Tours- Deoria tal, Uttarakhand