Tripsee Treks  and Tours LLP
Blog and Travel with Us

গুমটি টি এস্টেট



Subhamay Pal Subhamay Pal

 

বাঁক ঘুরলেই স্বপ্ন নিটোল

পুরোনো হিলকার্ট রোড দিয়ে চলতে চলতে মহানদী স্টেশন, পুরোনো, নস্টালজিক, টয় ট্রেনের বাঁদিকে গুটিগুটি একটা রাস্তা বেশ খাড়াই ; ওটা ধরে একটু উঠে বাঁদিকে বাঁক নিলেই- একরাশ সবুজ স্বপ্ন - গুমটি টি এস্টেট (Goomtee Tea Estate ) - এক বিরল অভিজ্ঞতার মুখোমুখি I

একটু এগোলেই চা কোম্পানির গেট I ঢুকে পড়তেই ব্রিটিশ যুগ  I চা কারখানাকে ডানদিকে রেখে পেছনদিকে চলে এলেই 'বড়া বাংলো' !! সাদা ধপধপে কাঠের বাংলো ১৯০০ সালের আশেপাশে তৈরী I কেয়ারী করা ফুলের জলসাকে সাক্ষী রেখে সিঁড়ি দিয়ে ভেতরে ঢুকতেই ব্রিটিশ এসেন্স I

লম্বা দুধসাদা করিডোর, বেতের পুরোনো আরামদায়ক চেয়ার, সুন্দর করে সাজানো বিভিন্ন পাতাবাহারি গাছ দিয়ে; ডানদিকে লিভিং রুম, ফায়ার প্লেস ও একদম ব্রিটিশ আমলের সব ফার্নিচার; তার ও পরে ডাইনিং রুম, সেটাও অনবদ্য ; একটা দেওয়াল কাঁচের, সেখান দিয়ে বাইরের সবুজ সারাক্ষণ I লম্বা করিডোরের বাঁদিকে লাইব্রেরি রুম; বহু দুষ্প্রাপ্য বইয়ের সংগ্রহ I  আর তারও পরে পরপর চারটে কিংসাইজ বেডরুম; বাথরুমেও সেই ব্রিটিশ যুগের বাথটব I বাংলোর পেছনদিকে দুর্দান্ত লন I

ছিঁটেফোঁটা ইতিহাস- চা বাগানটি তৈরী করেন ব্রিটিশ প্লান্টার হেনরি মন্টোগোমারি লেনক্স; বুড়ো পুরো পরিবার নিয়ে এই বাংলোতেই থাকতো; তাই স্থানীয় লোক বুড়ো সাহেবের বাংলো বলতো, তার থেকেই নাম 'বড়া বাংলো' I

স্বাধীনতার পরবর্তী সময়ে ওনার থেকে চা বাগান চলে আসে কেজরিওয়াল ও প্রসাদ পরিবারের দখলে I তারপর অন্যান্য বাগানের যেমন হাল হয়েছিল, এ বাগানও সেরকমই দিকে চলে যাওয়ার কথা ছিল; যেমন উৎকর্ষতা না মেনে যথেচ্ছ উৎপাদন করা, বাগানের কোনো অংশকেই ২-৩ বছর অনাবাদি না রাখা (যদিও সেটাই করা উচিত ), কর্মীদের অসহনীয় অবস্থায় দিন কাটাতে দেখেও কতৃপক্ষের কিছুই না দেখা, এবং অবশেষে গুণমানের কারণে আন্তর্জাতিক বাজারে ক্রমশঃ পিছিয়ে পড়া; কিন্তু না তা হয়নি, ওনারা ব্রিটিশ লেগাসি বজায় রেখেছেন; বাগান থেকে, বাংলো থেকে সব জায়গায় এই নিদর্শন আজও ছড়িয়ে আছে এবং আন্তর্জাতিক বাজারে এই বাগানের চা'র কদরও যথেষ্ট I বাকিংহাম প্যালেসে এই চা যায় I

একটু ভূগোল- ২২৫ হেক্টর জায়গা নিয়ে এই বাগান, তার প্রায় পঞ্চাশ শতাংশ জায়গায় চা চাষ হয়; বাকিটা শ্রমিক বস্তি, চা কারখানা, ম্যানেজার এবং অন্যান্যদের বাংলো ও কোয়ার্টার I বড়া বাংলো ৪১৫০ ফুট উচ্চতায়; একটা ছোট্ট টিলার ওপর I বাংলোর উত্তরে পাইনের সারি আর জংপানা টি এস্টেট, দক্ষিণে সবুজ বাগান, বগেনভিলিয়া আর ছোট্ট টিলা লতাপাতায় জড়ানো, পূর্বে সবুজ লন আর নিচে তিস্তার বিস্তার আর শিলিগুড়ির উজ্জ্বলতা, পশ্চিমে গোলাপ, জুঁইয়ের সমাহার ছাড়িয়ে উঁকি দিচ্ছে ফ্যাক্টরি।

বাকিটা- এই বাংলোয় থাকাটা রাজকীয়, আমি গেছিলাম ২০১৪ সালে, তখনকার মালিকের সাথে বিশেষ পরিচয় সুবাদে I যিনি কুক তার অসাধারণ রান্না, কিন্তু নিরামিষ, কারণ মালিকপক্ষ জৈন সম্প্রদায়ভুক্ত I সারাটাদিন ঘুরে বেড়াতাম গোটা চা বাগানে, ওই কারখানা, বাংলোকে পিছনে রেখে এগিয়ে গেলে মাটির রাস্তা , আর বাগান নেমে গেছে পাহাড়ের ঢাল বেয়ে ; সবুজ আরো সবুজ বিলীন হয়ে গেছে নিচের দিকে...

মাঝে মাঝে রেইন ট্রি; ওই চা বাগানের ভেতর দিয়ে দিয়ে সুঁড়ি রাস্তা ; ওই পাহাড়ের ঢাল নেমে গেছে নিচে ছোট একটা ঝোরায়; ওপর থেকে একটা ছোট্ট ঝর্ণা নেমে এসেছে, আর উল্টোদিকের পাহাড়ের ঢাল উঠে গেছে আবার চা এর সবুজ নিয়ে, উল্টোদিকের ওই বাগানের নাম জংপানা I গরমকালে গেলে ওই ঝর্ণায় স্নান করাও যাবে; আমি গেছিলাম আগস্টে, সারাদিন মেঘ, কুয়াশা আর চা বাগান I আমি চা প্রসেসিং আগেও অনেক দেখেছি, দার্জিলিং চা ও ডুয়ার্সের চা এর, কিন্তু এই বাগানে প্রথম আমি অরেঞ্জ টি, হোয়াইট টি এইসব ভ্যারাইটি দেখেছি এবং খেয়েওছি আর শুনেছি আন্তর্জাতিক বাজারে এই অরেঞ্জ ও হোয়াইট টি এর নাকি অসম্ভব চাহিদা I

কিছু তথ্য - নতুন রোহিণীর রাস্তা ধরে উঠে এসে কার্শিয়াংকে বাঁদিকে রেখে ডানদিকে রাস্তা ধরে এগিয়ে এলে নতুন এই হিলকার্ট রোড এসে পড়বে ওই মহানদী স্টেশনের কাছেই পুরোনো হিলকার্ট রোডেI

খুব কাছাকাছি পাগলা ঝোরা, গিদ্দা পাহাড়, ওখানে সুন্দর ভিউ পয়েন্ট আছে I  আর খুব কাছেই আছে নেতাজির স্মৃতি সংগ্রহশালা; একসময় এই বাড়িতে নেতাজি ছিলেন কিছুদিন; খুব সুন্দর করে তাঁর ব্যবহার্য্য জিনিস, ও অনেক ছবি সংগ্রহে রাখা আছে I

এছাড়া কার্শিয়াং, দার্জিলিং ঘুরতে যাওয়ায় যেতে পারে এখন থেকেI

এখন চা বাগানের বাংলোটি পুরোপুরি ট্যুরিস্টদের জন্য খুলে দেওয়া হয়েছে; কারণ এখন মালিকানা একটি বহুজাতিক সংস্থার I

দুজনের থাকা খাওয়া মোটামুটি ৬০০০ থেকে ৯০০০ এর মধ্যে ঘোরাফেরা করে; বিভিন্ন বুকিং সাইটগুলোর বিভিন্ন অফার দেখে নিতে পারেনI

Meet the Blogger

Subhamay Pal


Name: Subhamay Pal
Age: 48
Profession: State Civil Servant
City: Kalyani
Hobby: Story telling



You may also like