একেবারে ভিন্ন স্বাদের ভ্রমণের তাগিদে রান দেখতে চেয়েছিলাম। প্রবল উৎসাহ ও উত্তেজনায় তাই গুজরাট যাবার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। একদম শেষের ডেস্টিনেশন তাই ওটাই ছিল।
গুজরাটে পশ্চিম প্রান্তে প্রায় পাঁচ হাজার বর্গ কিলোমিটার জুড়ে লিটল রান আমাদের সকলকে মুগ্ধতায় ভরিয়ে রেখেছে এখনও।চোখ বন্ধ করলেই এখনো সেই সুখস্মৃতি অনুভব করি। জুনাগর থেকে রাতের ট্রেন ধরে ভোরে viramgam পৌঁছে সেখান থেকে গাড়িতে কচ্ছ পৌছাই। তিনদিন দু-রাতের বাধা সময়ে সব মিলিয়ে প্রায় আট ঘণ্টার সাফারিতে 40 বর্গ কিলোমিটার চষে ফেলেছি।আর আমাদের সকল আগ্রহ কে লিটল রান যথাযথ মর্যাদা দিয়ে মেলে ধরেছে নিজেকে, ধরা দিয়েছে তার আপন খেয়ালে।
আমার কাছে লিটল রান অদ্ভুত সুন্দর, আর পাঁচটা গড়পড়তা জায়গার তুলনায় একেবারেই অন্যরকম। এর কোথাও জলাভূমি, তো কোথাও কালো কাদামাটির বিস্তীর্ণ গোলকধাঁধা, কোথাও তৃণভূমিতে সজ্জিত, তো কোথাও সাদা নুনের ধু ধু প্রান্তর, এছাড়া বালিয়াড়ির সদর্প গর্ব, ফুটিফাটা চৌচির মাটির গগনভেদী হাহাকার, ছোট-বড় পাখিদের কিচিরমিচির, পরিযায়ী পাখিদের কলরব, বন্য গাধাদের আনন্দ উল্লাস লিটল রানকে প্রকৃত ভ্রমণপিপাসুদের আকর্ষণের চরমতম পর্যায়ে নিয়ে যায়। আমি ব্লটিং পেপার এর মত ওর সবটুকু রঙ ই শুষে নিয়েছি।
প্রথম বৈকালিক সাফারির প্রারম্ভিক পর্যায়ে পৌঁছে গেলাম জলাভূমির ধারে যা দেখার জন্য ভিতরে ভিতরে লাফাচ্ছিলাম --ওই তো লেসার ও গ্রেটার ফ্লেমিঙ্গো। তবে যতই আমরা এগোই ওরাও ততো পিছোঁয়। রান অঞ্চলএদের ব্রিডিংস্পট ও।গোধূলির সোনালী আভা তখন জলাভূমিতে সোনা ঢেলেছে।ওই স্বর্ণালী পটভূমির ঝিকমিক আলোয় ফ্লেমিঙ্গোদের ছন্দবদ্ধ বিচরণ এক স্বর্গীয় দৃশ্যের সৃষ্টি করলো। এরপর সেই বিস্তীর্ণ কাদামাটির গোলকধাঁধা, যার নাম black desert ঘুরে ঘুরে আমরা তৃণভূমির অংশে পৌঁছাই। বলে রাখা ভাল এখানে কোনো রাস্তা নেই । দিকচক্রবালের সর্বত্র একই
দৃশ্য। গাইড রা কি করে যে নির্দিষ্ট স্থানে পৌঁছায় কে জানে?? আনাড়িদের পথ হারাবার সম্ভাবনা 100 ভাগ। ওই তৃণভূমিতে আমরা সেই দুর্লভ দৃশ্যের সাক্ষী হলাম।
সামনে সাতটি বন্য গাধার একটি দল। এদের স্থানীয় নাম “খুর”; । একটাই মাত্র মেল বা পুরুষ রয়েছে। গাইড জানাল ওরা যে “মোরাবর”; ঘাস খাচ্ছে সেখানে থেকে ওরা খাদ্য ও জল দুটোই পায়। কিছুক্ষণ থেকে, ফিরে ,আবার ওই গোলকধাঁধা অতিক্রম করে এলাম নুন তৈরীর জমিতে। এখানকার ভূগর্ভস্থ জল সমুদ্রের তুলনায় অনেকটাই বেশি লবণাক্ত। তাই নিচের জল তুলে প্রায় তিন মাসের কঠিন পরিশ্রমে তা থেকে নুন তৈরি হয়।শ্রমিকরা ওইখানে ওই নির্জন প্রান্তে পড়ে থাকে, আড়ম্বরহীন নিস্তরঙ্গ জীবন কাটায়। আলাপ হল এমন একটি পরিবারের সাথে যারা ঐ গোলকধাঁধায়, ওই কালো মরুভূমিতে একা পড়ে আছে। ফিরে আসার পথে একটি গ্রামে যে বড় বড় ধূসর ঢিবি দেখলাম গাইড বললো ওগুলো সব জড়ো করা নুনের পাহাড়।
পরেরদিন খুব ভোরেই সাফারি শুরু করি, উদ্দেশ্য ”বাজানা” যাব খুব কাছে থেকে ফ্লেমিঙ্গো দেখব। কিন্তু কয়েক ঘন্টায় লিটিল রান তুর্কি নাচ নাচলো। পথের শুরুতেই,_ যাকে বলে জটায়ুর ”ওটা আমার” গোছের আনন্দের বহিঃপ্রকাশ, সামনে যে!!! এক ঝাঁক পেলিকান??!! উফফ, কি রূপ তাদের!! বেশিরভাগই ডালমেশিয়ান পেলিকান, তবে হোয়াইট পেলিকান ও আছে। ওদের কলকলানি তে আকাশ বাতাস মুখরিত। অল্প দূরত্বে ফ্লেমিঙ্গো , কমন ক্রেন, ল্যাপ উইং, স্পুনবিল,গুজ এর দল, ঝাঁক ঝাঁক পিন টেল আপন খেয়ালে চড়ে বেড়াচ্ছে ,সাঁতার কাটছে ,ফিশিং করছে।
খানিকক্ষণ কাটানোর পর একটু এগিয়ে আবার সেই একই দৃশ্য। এদিকে মাটিতে ম্যাককুইন বাস্টার্ড ছুটে ছুটে বেড়াচ্ছে। আমরা বাবলার ঝোপের মাথায় একটা ইগল দেখলাম।
কিছুক্ষণ সাফারি পর আবার সেই কালো মরু।মাইলের পর মাইল সেই পূর্বপরিচিত গোলকধাঁধা পেরিয়ে অন্য অংশে আবার তৃণভূমিতে পৌঁছালে পুনরায় একটি ”খুর” এর দল দেখা গেল। মনের আঁশ মিটিয়ে দেখে নিলাম। ফেরার পথে আবার পেলিকান। এবার ওরা আরো কাছে।
আমাকে সব থেকে বেশি অবাক করেছিল এমন একটা মরুভূমিতে কিভাবে এত পাখি থাকতে পারে??!! জলাভূমির কথা না হয় ছেড়েই দিলাম, ওরাতো পরিযায়ী, কিন্তু ওই মরু অঞ্চলের ছোট ছোট ঘাসে আর ঝোপে শুধু পাখি আর পাখি। ফ্লাই ক্যাচার, রুফাস টেল স্ট্রাইক, রবিন, বি ইটার, অসংখ্য বুশ চ্যাট আরো কত কি নিজের চোখে দেখেছি। ফেরার পথে ঝোপের নিচে মরু পেঁচা ও দেখেছি। আসলে লিটিল রান আমাদের কাছে নিজেকে উজাড় করে দিয়েছে, এতোটুকু ফাঁক রাখেনি। যেন বলেছে কি? কেমন?? এমন গোধূলি, এমন ভোর__ কটা দেখেছো?? সাফারি শেষে দেখি সকলের মুখে অসম্ভব পরিতৃপ্তির এক বিরল যুদ্ধ বিজয়ের হাসি।।
Name- GOPA SARKAR
Profession- ASSISTANT TEACHER
City- ATHPUR
Hobbies- PAINTING, TRAVELLING & READING BOOKS.
Previous Tours- DIFFERENT PLACES IN BENGAL, SIKKIM, MP, BENARAS, GUJRAT, CHENNAI, KUMAUN, GARWAL, ANDHRA PRADESH, ORISSA & DELHI.