Tripsee Treks  and Tours LLP
Blog and Travel with Us

আহ, কাভেরী...



Sajol Zahid Sajol Zahid

একটা সময় ছিল, যখন শুধু নাম শুনেই কাউকে কাউকে ভালোলেগে যেত! আর নাম শুনে শুনেই এক সময় ভালোলাগাটা, ভালোবাসায় আর ভালোবাসা হয়তো প্রেমেও রূপ নিত, একান্তে, মনে মনে। একটা সুখের অনুরণন তুলতো প্রানের মাঝে। তার নাম শুনলেই কেমন একটা সুখ সুখ অনুভূতির আবেশ ঘিরে ধরতো, অনেকটা সময় সেই সুখের আবেশে কাটিয়ে দেয়া হত, কোন একদিন তার সাথে দেখা হবে, হয়তো পাশে বসা হবে আর খুব বেশী ভাগ্যবান বা ভাগ্যবতী হলে তাকে নাম ধরে ডাকা হবে।

​প্রথমবার কোন একটা দক্ষিন ভারতের সিনেমায় নায়িকার নাম ছিল “কাভেরী” বাংলায় যার উচ্চারণ “কাবেরী” তবে হ্নিন্দিতে “কাভেরী” আহা, আমি শুধু নায়িকার সেই নামে মুগ্ধ হয়েই পুরো অবাস্তব একটা সিনেমার সম্পূর্ণটা দেখে শেষ করেছিলাম। সত্যি বলছি শুধু নায়িকার “কাভেরী” নামটাই আমাকে মন্ত্র মুগ্ধের মত আটকে রেখেছিল টিভির সামনে। সেইদিন থেকে “কাভেরী” নামটার প্রতি আমার একটা অমোঘ আকর্ষণ, একটা একান্ত ভালোলাগা, একটা নিশ্চুপ আবেগ, যেটা আমি একা একাই উপভোগ করতে ভীষণ ভালোবাসি।

​তো এই বছরের মাঝামাঝি একটা সোলো ট্যুরে দক্ষিণ ভারত দর্শনের পরিকল্পনা করেছিলাম। যে সোলো ট্যুরে নানা রকম স্পটের মধ্যে আমার অন্যতম আকর্ষণ ছিল একটা জলপ্রপাত। যেটা দক্ষিণ ভারতের তামিলনাড়ু আর কর্ণাটক রাজ্যের সীমান্তে অবস্থিত। প্রথমে এইটুকুই ছিল আমার আকর্ষণ যে জলপ্রপাত আর সেটাও কিনা কর্ণাটক আর তামিলনাড়ুর সীমান্তে অবস্থিত, যার একটি প্রদেশেও এর আগে আমি যাইনি। আর সবচেয়ে বড় আকর্ষণ তো আছেই, ভারতের অন্যতম আর বিশেষ একটা জলপ্রপাত “হোগেনেক্কাল” নিজের চোখে দেখা আর উপভোগ করা।তো হোগেনেক্কাল জলপ্রপাত নিয়ে একটু গুগলে পড়াশুনা করতেই গিয়েই প্রথমে জানতে পারি যে আমার একান্ত প্রিয় নাম “কাভেরী” বা কাবেরী নামে একটা নদী আছে সেখানে, যেটা সেই জলপ্রপাতের সাথেই তামিলনাড়ু আর কর্ণাটকের মাঝে পড়েছে। মূলত এই নদী দিয়েই জলপ্রপাতের শুরু আবার নানা জায়গায় বিচরণ করে এই নদীতেই সেই বিস্ময়কর জলপ্রপাতের পতনও হয়েছে।
এই তথ্য জানার পর থেকেই যতটা না আমি জলপ্রপাত দেখতে তামিলনাড়ু ছুটে যেতে চেয়েছি তারচেয়ে অনেক বেশী আকর্ষিত হয়েছিলাম আমার প্রিয়তমার নামে থাকা নদীটির প্রতি। কাভেরী বা কাবেরী কে একদম কাছ থেকে দেখবো, পাশে বসবো, ছুঁয়ে দেব, শিহরিত হব আর তার শীতল জলে, সুখের অবগাহনে বিলীন হয়ে যাবো। সেই স্বপ্ন আর সুখের কল্পনায় ছুটে গিয়েছিলাম কাবেরীর পানে। এমনকি সেই যাত্রাটাও ছিল গাঁ ছমছমে, নির্জন রাতে, ট্রেনে আর একদম অজানা অচেনা এক প্রান্তে।

মাইশুর থেকে সন্ধ্যায় ট্রেনে চেপে এক গাঁ ছমছমে মধ্যরাতে নেমেছিলাম ধরমপুরী স্টেশনে। সেখানে নিজেকে সত্যিকারের প্রমাণ করে, রাতটুকু স্টেশনে কাটিয়েই বাসে উঠে পড়েছিলাম হোগেনেক্কাল যাওয়ার। তামিলনাড়ু আর কর্ণাটকের মাঝ দিয়ে দারুণ রোমাঞ্চকর এক অদ্ভুত রকমের অরণ্য পেরিয়ে যেতে হয়েছিল কাবেরী নদীর তীরে। যেখানে পৌঁছেই পেয়েছিলাম, এক ঝলমলে সকাল, ঝকঝকে হাসি আর আবেগি আহবান, ঘটেছিল আমার অসীম অপেক্ষার অবসান কাবেরীর স্পর্শে।

বাস থেকে নেমে, বাস স্টপেই একটু ফ্রেস হয়ে সামনের দিকে এগিয়ে চলেছি অন্যান্য মানুষদের অনুসরণ করে। একটু পথ যাওয়ার পরে হাতের ডানে জল গড়িয়ে চলার স্রোতের শব্দ কানে এলো মনে হল। আমি থমকে দাড়িয়ে এদিক ওদিক তাকালাম। হাতের ডানে চোখ যেতেই চোখ আটকে গেল। ছোট দেয়ালের ওপারে টলটলে স্বচ্ছ আর টলটলে জলের একটা স্রোতধারা বয়ে চলেছে। যা আমাকে থমকে দিল। আমি আগে পিছে না ভেবে দেয়ালের কাছে গিয়ে অবাক আর অভিভূত হয়ে গেলাম। পাহাড় যেখানে সমতলের সাথে মিশেছে অনেকটা যায়গা জুড়ে বা যাকে আমরা ভ্যালী বলে।

জানি, সেখানে আপন মনে বয়ে চলেছে সেই নদী, সেই নাম জেনেই ভালো লেগে যাওয়া, ভালোবেসে ফেলা আর ধীরে ধীরে প্রেমে পড়ে যাওয়া সেই নদী “কাভেরী বা কাবেরী”। নাম শুনেই যাকে দেখার জন্য আকুল হয়ে গিয়েছিলাম সেই নদী।

উফ, কিভাবে বোঝাই আমার সে সময়ের অনুভুতি কেমন ছিল? আমি বাকরুদ্ধ হয়ে গিয়ে, অপলক তাকিয়েছিলাম তার দিকে। বোধহীন হয়ে গিয়েছিলাম তার কোমল মিহি আর কমনীয় শরীর দেখে, মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে ছিলাম তার আপন মনে চলার পথের দিকে, পাহাড়ের ভ্যালীতে, পাথরের ফাঁকে ফাঁকে তার বয়ে চলার উচ্ছাস ছুঁয়ে যাচ্ছিল আমাকে, স্পর্শ করতেই যেন সমস্ত শরীরে শিহরণ বয়ে গেল! আমি বোধ ফিরে পাওয়ার পরে বুঝতে পারছিলাম না কি করবো তখন? দাড়িয়ে থাকবো? বসে পড়বো? কাভেরীর কাছে গিয়ে ওকে ছুঁয়ে থাকবো নাকি ওর বুকের মাঝে গিয়ে নিজেকে হারিয়ে ফেলব?

হ্যা তবে তাই হোক। আমি কাভেরীর কাছে, পাশে, ওকে ছুঁয়ে বা দূর থেকে দেখে তৃপ্ত হতে পারবোনা। এতো অল্পতে আমার হবেনা। আমি যে সুখ চাই তা ঠিক পাওয়া যাবেনা। আমি কাভেরীতে হারাতে চাই, ওতে ডুবতে চাই, ওর বুকের মাঝে নিজেকে সঁপে দিতে চাই! হ্যা তাই-ই চাই! তাই আর কিছু না ভেবে আর কিছু না করে সব ভুলেটুলে কাভেরীর একদম বুকের মাঝে গিয়ে নিজেকে সঁপে দিলাম।

আহ কি আনন্দ, কি সুখ, কি আদরের স্পর্শ, কি কোমল ছোঁয়া বলে বা লিখে বোঝাবো সাধ্য কি সে আছে? নেই। আমি আমার ভালোলাগার, কাছে পাওয়ার, বাঁধাহীন কাভেরীর কাছে নিজেকে সমর্পিত করেছিলাম অনন্ত সময়ের জন্য, আকুল আবেগে আমি হারিয়ে গিয়েছিলাম কাভেরীর কোমলতায়। চিৎকার করে ডেকে ছিলাম তাকে “কাভেরী নামে”।

আর মনে মনে ঠিক করেছিলাম এই জীবনে দ্বিতীয়বার যদি প্রেমিকা জোটে আমার কপালে তবে তাকে দেব আমার একান্ত ভালোবাসার এই নাম “কাভেরী…

Meet the Blogger

Sajol Zahid


Name: Sajol Zahid (সজল জাহিদ)
Profession: Private Service
City: Dhaka (Bangladesh)
Hobby: Travelling and Writing
Previous Tours: Nalanda and Chupir Char



You may also like